অঘটন কিংবা রূপকথা কিছুই হলো না। তার বদলে হলো সর্বোচ্চ রানে বিজয়ের রেকর্ড। সহজ ভাষায় বললে- নেদারল্যান্ডসকে ৩০৯ রানে রেকর্ড হারের লজ্জা দিল অস্ট্রেলিয়া।
বিশ্বকাপে দুরন্ত ছন্দে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে থামিয়ে দিয়ে অঘটনের জন্ম দিয়েছিল নেদারল্যান্ডস। প্রত্যাশা ছিল, না হারালেও অন্তত অজিদের বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলবে ডাচরা। এমনটাই প্রত্যাশা ছিল। তবে বিশ্বকাপের ২৪তম ম্যাচে হলো না কিছুই। দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে পাত্তাই পায়নি নেদারল্যান্ডস। বরং বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়ের লজ্জাই পেতে হয়েছে তাদের। অজিদের কাছে নেদারল্যান্ডস হেরেছে ৩০৯ রানে।
৪০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা নেহায়েত মন্দ হয়নি ডাচদের। দুই ওপেনার ম্যাক্স ও’ ডড এবং বিক্রমজিৎ সিং শুরু করেছেন ভালোভাবেই। ৪ ওভারে রান উঠেছিল ৭ এর উপরে। তবে ওটুকুই ছিল বলার মত। ৫ম ওভারে ম্যাক্সকে সরাসরি বোল্ড করে ধ্বংসযজ্ঞের শুরু করেন মিচেল স্টার্ক। ৯ রান আর এক ওভার পর আবার উইকেটের পতন। ম্যাক্সওয়েলের দুর্দান্ত রানআউটে সাজঘরে ফেরেন বিক্রমজিৎ।
১০ রান পর আরও একবার উইকেটের পতন। এবার অধিনায়ক কলিন অ্যাকারম্যান ফিরে গিয়েছেন জশ হ্যাজেলউডের বলে লেগ বিফোরের শিকার হয়ে। আর ৫৩ রানে নির্ভরযোগ্য বাস ডি লিড আউট হলে ডাচদের পরাজয় হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। ৫৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর ম্যাচে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি কমলা শিবিরকে।
সাইব্যান্ড অ্যাঙ্গেলব্রাখট, তেজা নিদামানুরু কেউই টিকতে পারেননি এমন বোলিং তোপের সামনে। ৮৪ থেকে ৯০ এই ৬ রান তুলতেই শেষ ৫ উইকেট হারায় ডাচরা। মাঝে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। যদিও শেষ পর্যন্ত হতাশই হতে হয়েছে তাকে। ডাচদের ইনিংসে বিক্রমজিৎ সিং ছাড়া ২০ এর বেশি রান করতে পারেননি কেউই। শেষ পর্যন্ত মাত্র ৯০ রানেই অলআউট হয়ে ৩০৯ রানের পরাজয় বরণ করতে হয় তাদের। এটি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ, এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে ৩য় সর্বোচ্চ ব্যবধানে পরাজয়।
এর আগে, দিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে টস জিতে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ওয়ার্নার-ম্যাক্সওয়েলের রেকর্ডরাঙা সেঞ্চুরিতে ভর করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ৩৯৯ রানের পাহাড় গড়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা।
বিশ্বকাপে টানা দুই হারে অস্ট্রেলিয়াকে বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়েছিল অনেকেই। শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে টুর্নামেন্টে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে রেকর্ড পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হারের পর টানা জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। সেমিফাইনালের দৌড়ে এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও দাপট দেখালেন অজি ব্যাটাররা।
শুরুটা ভালো ছিল না অস্ট্রেলিয়ার। দলীয় ২৮ রানেই প্রথম উইকেট হারায় তারা। ব্যক্তিগত ৯ রানে ভ্যান বেইকের শিকার হন পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান ওপেনার মিচেল মার্শ। দ্রুত উইকেট হারানোর ধাক্কা সামলে ডেভিড ওয়ার্নার এবং স্টিভেন স্মিথের ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় ক্যাঙ্গারু বাহিনী। রানে ফেরার দিনে স্টিভ স্মিথ ৬৮ বলে ব্যক্তিগত ৭১ রানে ফিরলেও অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন ওয়ার্নার।
পাকিস্তানের বিপক্ষে রেকর্ড ১৬৩ রানের পর আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছালেন অজি এই তারকা ওপেনার। মাত্র ৯১ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২২ তম সেঞ্চুরি তুলে নেন। সেঞ্চুরির পথে একাধিক রেকর্ডও গড়েছেন ওয়ার্নার। চতুর্থ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে টানা সেঞ্চুরি পেলেন তারকা এই ওপেনার।
অবশ্য সেঞ্চুরির পর বেশিক্ষণ ক্রিজে থিতু হতে পারেননি ওয়ার্নার। লগান ভ্যান ভিকের বলে আরিয়ান দত্তের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরার আগে করেছেন ৯৩ বলে ১০৪ রান। ওয়ার্নারের বিদায়ের পর সব আলো কেড়ে নিলেন ম্যাক্সওয়েল। একের পর এক চার-ছয়ে ডাচ বোলারদের দুঃস্বপ্নই উপহার দিয়েছেন তিনি।
ইনিংসের একেবারে শেষ দিকে ৪০ বলে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করেন ম্যাক্সওয়েল। বাস ডি লিডের বলে ছক্কা মেরে করেন বিশ্বকাপের নতুন রেকর্ড। ভেঙ্গে দেন এইডেন মার্করামের রেকর্ডকেও। চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই দিল্লিতেই ৪৯ বলে সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছিলেন মার্করাম। তবে সেই রেকর্ড টিকলো কেবল ১৮ দিন।
ম্যাক্সি ঝড়ে শেষ ১০ ওভারে অস্ট্রেলিয়া তুলে নেয় ১৩১ রান। ডাচদের বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ৩৯৯ রান জমা করে অজিরা। এমন টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে অবশ্য ন্যূনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়া হয়নি নেদারল্যান্ডসের।