টাঙ্গুয়ায় কেটে ফেলা হলো অর্ধশত হিজল-করচ গাছ

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের অজুহাতে অর্ধশতাধিক হিজল-করচ গাছ কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের তেরঘর গ্রামের ইউসুফ মিয়া ও গোলাপ নূর লোকজন নিয়ে সম্প্রতি গাছগুলো কেটে ফেলেন। এ সময় তারা ডালপালা কেটে আরও অর্ধশত গাছের ক্ষতি করেন।

বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয়রা তাদের রুখে দেন। পরে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এলে বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) বিকেলে তাহিরপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুপ্রভাত চাকমা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তবে পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি। নিয়মিত মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টাঙ্গুয়ার হাওরের পলিয়ার বিলের হিজল-করচ বাগান সবার কাছে পরিচিত। এখানে বর্ষায় পর্যটকরা এসে নৌকা ভিড়িয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। বর্ষায় মাছের অভয়াশ্রম ছাড়াও হেমন্তে পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিজল-করচ বাগান। এখানে আড়াই ফুট প্রস্থ ও দেড় ফুট উচ্চতার মাত্র ৫০০ ফুট বাঁধ নির্মাণের জন্য গত সোম ও মঙ্গলবার এক্সক্যাভেটর ঢোকায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় এক্সক্যাভেটরের পথ করতে ৫০টির বেশি হিজল-করচ গাছ কেটে ফেলা ছাড়াও ডালপালা ছেঁটে ফেলা হয় অনেক গাছের। পরে হাওরপাড়ের পরিবেশপ্রেমীরা তাঁদের রুখে দেন।

হাওরপাড়ের মন্দিয়াতা গ্রামের খসরু মিয়া জানান, ছোট্ট বাঁধ করতে এক্সক্যাভেটর ঢুকিয়ে সর্বনাশ করা হয়েছে। কয়েকজন শ্রমিক লাগালেই এ বাঁধ করা যেত। কোনো গাছ কাটার প্রয়োজন হতো না। গাছ কাটার জন্য ইউসুফ মিয়া ও গোলাপ নূরকে দায়ী করেন স্থানীয়রা।

তবে ইউসুফ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, হাওরপাড়ের রতনপুর, মন্দিয়াতা, তেরঘর, কামনাপাড়া, কান্দাপাড়া ও বিনোদপুর গ্রামের কৃষকরা ‘অ্যারাইল্যাকোনা’ হাওরে ধান রোপণ করেছেন। এ ফসল রক্ষায় তাঁরাই বাঁধ দিয়েছেন। এর সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন।

মন্দিয়াতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজু মিয়া জানান, এখানে ফসল রক্ষা বাঁধের কোনো প্রয়োজন নেই। অতীতে কখনও বাঁধ দেওয়া হয়নি। বাঁধ নির্মাণের নামে তাদের অন্য ধান্দা ছিল।

১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করে ইজারা প্রথা বন্ধ করা হয়। ২০০৩ সালের নভেম্বর থেকে হাওরটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আছে জেলা প্রশাসন। তবে টাঙ্গুয়ার হাওর কেন্দ্রীয় গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক আহমেদ কবির অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে হাওরের ৫০ ভাগ করচ, ১০ ভাগ হিজল এবং ৭০ ভাগ নলখাগড়া, গুইজ্জাকাটা, বনতুলসী, চাইল্যা, বউল্যা ও উকল গাছ উজাড় হয়ে গেছে। জ্বালানির জন্য স্থানীয়দের পছন্দ নয় বলে এখনও টিকে আছে হিজল গাছ।

ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা জানান, কেটে ফেলা গাছগুলো ৩০ বছর আগে লাগানো। জড়িতদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন।