টাকা নিয়ে উধাও ভুঁইফোড় কোম্পানি, মুখ খুললেন ব্যবস্থাপক

শাল্লায় গ্রাহকদের ২০ লক্ষ টাকা নিয়ে উধাও হয়ে যাওয়া ‘স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড’ এর প্রতারণা নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রতিষ্ঠানটির শাল্লার শাখা ব্যবস্থাপক ঝলক চন্দ্র দাশ।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) সকালে সিলেটভয়েস’র সাথে আলাপচারিতায় ভূয়া কোম্পানি স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রতারণার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন ঝলক চন্দ্র দাশ। ঝলক শুরু থেকেই এই কোম্পানির শাল্লা শাখার ব্যবস্থাপকের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

ঝলক জানান, স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান খান ও সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়লী আক্তার প্রথমে স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে কাজ শুরু করেন শাল্লায়। পরে ধাপে ধাপে হেলথ কার্ডের নাম করে লোকজনের কাছ থেকে টাকা তোলেন। এরমধ্যে  ৫০০ টাকা মূল্যের ২০০ কার্ড, ৭০০ টাকার ১২০ টি ও ১২০০ টাকার ৫০০ টি কার্ডের বিনিময়ে টাকা নেয়া হয়।

শুধু তাই নয় পরে গৃহায়ণ প্রকপ্ল-৩ এর মাধ্যমে লোকজনকে ঘর নির্মাণ করে দেবার কথা বলে আরও ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে যায় মতিউর রহমান খান। এছাড়াও হাঁসের খামার দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা, টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে ৪২ হাজার টাকা নিয়ে যায় প্রতারক মতিউর।

ঝলক বলেন, কোনো এক সময় এলাকার মানুষের চাপে আমি ১২০০ টাকা কার্ডের ১৪০ জন সদস্যকে আমার নিজ উদ্যোগে ঋণ করে টাকা দিতে হয় এবং টাকা দিয়েও ঘর না পাওয়া কয়েকজনের টাকাও ফেরত দিতে হয়েছে। বেশ কয়েকজনের হাঁসের খামারের নামে টাকাও আমাকেই ফেরত দিতে হয়েছে। তিনি জানান, সদস্য ও এলাকাবাসীর চাপে পড়ে নিজ থেকে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছেন।

তবে ঝলকের দাবি ভুঁইফোড় এই কোম্পানির প্রতারণার শিকার তিনি। প্রতারক চক্রের এসব টাকা দেয়া নেয়া ঝলক একা করেন নি। তার সাথে সাথে মাঠকর্মী হারুন মিয়া, খায়রুন নেছা ও শান্তা তালুকদারও একইভাবে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। ভুঁফোড় এই কোম্পানির ফাঁদে পরে হাজারও সাধারণ মানুষের মতো তারাও সব হারিয়েছেন।

ঝলক চন্দ্র দাশ বলেন, কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান খান শাল্লায় আসবে আসবে বলে দীর্ঘ সময় নিয়ে ১০ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। আমি যখন এলাকার টাকার জন্য চাপ দিতে থাকি তখন সে মাঠকর্মী হারুন মিয়া, খায়রুন নেছা ও শান্তা তালুকদারকে দিয়ে আমার কাছ থেকে ২ মাসের সময় নেয়।

ঝলাক জানান, ২০২২ সালে নভেম্বর মাসের ২২ তারিখে মতিউর রহমান শাল্লা এসে সকল সদস্যদের নিয়ে বৈঠক করে আমার কাছে ২ লাখ টাকার চেক দিয়ে যায় এবং বলে যায় “আপনাদেরকে যদি কেউ টাকা রিটার্নের জন্য চাপ দেয় তাহলে চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করে দিবেন।” তবে এরপর আর সে কোনো প্রকার সমাধান দেয় নি।

ঝলকের ভাষ্যমতে, ঝলক এবং হারুনকে একাধিকবার ঢাকা হেড অফিসে ডেকে নিয়ে সকল কাজে ডকুমেন্টস দিতে বলেন মতিয়ার। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটিও হয়।

ঝলক বলেন, স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান খানের ফাঁদে পড়ে আমি এবং আমার পরিবার এখন সর্বহারা। আমাকে প্রায় ৬ মাস যাবত কোম্পানির এমডি মতিউর রহমান খান বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে আসছে। মতিউর রহমান এলাকা থেকে সদস্যদের কাছ থেকে যে টাকাগুলো আত্মসাৎ করেছে আমি অনেক চেষ্টা করেও সেই টাকাগুলো ফেরত আনতে পারিনি।

মতিউর রহমান খান সারা-বাংলাদেশ থেকে এইরকম গৃহায়ন প্রকল্প-৩ ও টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে টাকা নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন ঝলক। তিনি এই প্রতারক চক্রের প্রতারণার বিরুদ্ধে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সাহায্য চান।

জানা যায়, কথিত সেই স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের হেড অফিস রাজধানীর মিরপুরে মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের ৬তলায়। এই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান খান ও সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক লায়লী আক্তার। মতিউর রহমান যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার মির্জানগর গ্রামের চাঁদ আলী খানের ছেলে।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ জুন “শাল্লায় ২০ লক্ষ টাকা মেরে স্মার্ট ওয়ার্ক কোম্পানি উধাও”এই শিরোনামে সিলেটভয়েসে একটি সংবাদ প্রচার করা হয়। এরপর থেকে তাদের শাল্লা শাখা অফিসে এই কোম্পানির কোন লোককে এখন পর্যন্ত দেখা যায় নি। ধীরে ধীরে এই স্মার্ট ওয়ার্ক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড শাল্লা থেকে সম্পূর্ণ গা ঢাকা দেয়।