টাইগারদের দারুণ শুরুর পর যখন পাঁচ উইকেট হারিয়ে ধুকছিল কিউইরা তখনই বৃষ্টির হানা। সে বৃষ্টি আর থামেনি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছেন আম্পায়াররা।
এর আগে সকাল থেকেই মিরপুরে রোদ ছিল। নির্ধারিত সময়ে টসও হয়েছে। তবে খেলা শুরুর ঠিক মিনিট পাঁচেক আগে হানা দেয় বৃষ্টি। এরপর খেলা শুরু হলে আরও দুই দফা বৃষ্টি আসে। ফলে খেলা চালিয়ে যাওয়া আর সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে খেলা পরিত্যক্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত ৩৩ ওভার ৪ বলে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেছেন উইল ইয়াং। বাংলাদেশের হয়ে ২৭ রানে ৩ উইকেট শিকার করেছেন মুস্তাফিজুর রহমান।
টস জিতে আগে ফিল্ডিং নেওয়া বাংলাদেশ শুরু থেকেই কিউই ওপেনারদের বেশ চাপে রাখে। সুইং, সিম মুভমেন্ট ছাড়াও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে দারুণ শুরু করেন মুস্তাফিজ। আরেক প্রান্তে তানজিম হাসান সাকিবও চেপে ধরেন। ফলে ৪.৩ ওভারে সফরকারীরা স্কোরবোর্ডে তুলতে পারে মোটে ৯ রান। তবে এরপরই বৃষ্টির হানা। প্রথম দফার এই বৃষ্টিতে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়েছে। তাতে কমে এসেছে ম্যাচের দৈর্ঘ্য। ৮ ওভার করে কাটা গেছে। প্রত্যেক দল বরাদ্দ পেয়েছে ৪২ ওভার করে।
বৃষ্টির পর মুস্তাফিজকে চার মেরে শুরু করেছিলেন ফিন অ্যালেন। তবে পরের ওভারে ফিরে প্রতিশোধ নেন এই বাঁহাতি পেসার। লেগ স্টাম্পের ওপর মুস্তাফিজের করা রাইজিং ডেলিভারীতে টেনে খেলতে গিয়ে এজ হয় অ্যালেনের। উইকেটের পেছনে দুর্দান্ত ড্রাইভে সেটা তালুবন্দি করেন নুরুল হাসান সোহান। ৯ রান করা অ্যালেনকে ফিরিয়ে কিউই শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন মুস্তাফিজ।
পরের ওভারে আক্রমণে ফিরে আবারও ব্রেকথ্রু দিয়েছেন মুস্তাফিজ। এই পেসারের বের হয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন চ্যাড বোস। ৩ বল খেলে তার ব্যাট থেকে এসেছে ১ রান।
শুরুর ধাক্কা সামলে হেনরি নিকোলস আর উইল ইয়াং এর ব্যাটে ঘুরে দাঁড়ায় কিউইরা। তবে ১৬তম ওভারে ফিরতে পারতেন ইয়াং। বলা যায় কপালের গুণেই বেঁচে যান তিনি! দ্বিতীয় বলটি মিডল স্টাম্পের ওপর লেন্থ ডেলিভারী ছিল তানজিম সাকিবের। ইন সুইং করে বল আঘাত হানে প্যাডে। জোড়ালো আবেদন করেছিলেন বোলার কিন্তু আম্পায়ার সাড়া দেননি। রিভিউও নেয়নি বাংলাদেশ। পরে বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, রিভিউ নিলে আউট হতো।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচের মোড় ঘুরানোর চেষ্টা করছিলেন নিকোলস-ইয়াং। এই জুটি কিছুটা হলেও বিপজ্জ্বনক হয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের জন্য। যখন লিটনের উইকেট দরকার, তখন আরও একবার মুস্তাফিজ! এবার তার শিকার নিকোলস। বেশ বাইরে থেকে ভেতরের দিকে ঢুকছিল বলটি, ব্যাটে খেলতে পারেননি বল আঘাত হানে তার প্যাডে। আম্পায়ার আউট দিলে নিকোলস অবশ্য রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে কাজে আসেনি সেটি। মুস্তাফিজের আঘাতে ভাঙে ৯৭ রানের জুটি। নিকোলস থেমেছেন ৪৪ রানে।
উইকেটে এসে বেশ ভুগছিলেন ইয়াং। শুরুর ৩৮ বলে করেছিলেন ১২ রান। ব্যাটে-বলেও ঠিকমতো করতে পারছিলেন না। তবে কিছুটা সময় নিয়ে হলেও সেট হয়েছেন, দলের হাল ধরেছেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খোলস ছেড়েও বেরিয়ে এসেছেন। ৮৩ বলে তুলে নেন ফিফটি। তবে এরপর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ৩১তম ওভারের নাসুমের দ্বিতীয় বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিজের বিপদ ডেকে আনেন ইয়াং। টার্নে পরাস্ত হয়েছেন এই ব্যাটার, বাকি কাজ সেরেছেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। ৯১ বলে তার ব্যাট থেকে এসেছে ৫৮ রান।
এর এক বল পর আবারও উইকেটের দেখা পান নাসুম। এই বাঁহাতি স্পিনারকে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি রাচিন রবীন্দ্র। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। এরপর আউট দিতে বাধ্য হন আম্পায়ার।
৩৪তম ওভারের খেলা চলার সময় দ্বিতীয় দফায় বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়। এরপর শুধুই অপেক্ষা বাড়তে থাকে। কয়েক দফায় বৃষ্টি থেমেছে, মাঠ ঠিক করা হয়েছে, কিন্তু বল মাঠে গড়ানোর আগেই আবার হানা দিয়েছে বৃষ্টি। ম্যাচটিতে ফলাফল বের করার জন্য দুই দলেরই কম পক্ষে ২০ ওভার করে খেলতে হতো, সেক্ষেত্রে ৯টা ৬ মিনিটেও যদি খেলা শুরু করা সম্ভব হতো তাহলে ২০ ওভারে লক্ষ্য তাড়ায় নামতো বাংলাদেশ। তবে সেটিও সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয়েছে।