ঝুঁকিমুক্ত হলো কুমারগাঁও বিদ‍্যুৎ কেন্দ্র

ভয়াল বন্যায় সিলেটের উপশহর বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্র পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সঞ্চালন। পানিবন্দি মানুষ নানা সংকটের মধ্যে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সব ধরণের যোগাযোগ। বন্যার পানি বাড়তে থাকলে সিলেট থেকে জাতীয় গ্রিড লাইনের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্রও পানিতে তলিয়ে যায়। বৈরী আবাহাওয়া, অতিবৃষ্টি আর উজানের ফলের পানি বাড়তে থাকলে এটিও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে কুমারগাঁও পরিদর্শন করে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী সিলেটের সর্বস্তরের প্রশাসনসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি রক্ষার আহবান জানান। দ্রুত সময়ের মধ্যে সিলেট জেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি চৌকস দল কুমারগাঁও পৌঁছায় এবং বিদ‍্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের। এতে উপ-কেন্দ্রে পানি প্রবেশ রোধ আর উপকেন্দ্রের ভেতরের পানি সেচ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরিবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। সে অনুযায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়। সিলেট বেঁচে যায় বিদুৎ বিচ্ছিন্নতা থেকে।

পরের দিন আরও পানি বাড়লে সংকটাপন্ন অবস্থা পড়ে গোটা কেন্দ্রটি। সিলেট সিটি কর্পোরেশন, সেনাবাহিনী ও বিদ্যুৎ বিভাগের চেষ্টা অব্যাহত থাকে। পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনে শুধুমাত্র উপ-কেন্দ্রের সঞ্চালন ইউনিটকে কেন্দ্র করে নতুন করে বাঁধ তৈরি করা হয়। তাতে ফলও আসে। বাঁধ নির্মাণকালীন কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ সঞ্চালন বন্ধ রাখলেও ভয়াল বন্যার মধ্যেও নগরের যে সকল এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়নি সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়।

আজ সোমবার (২০ জুন) থেকে পুরোপুরি নিরাপদ অবস্থানে সিলেটের কুমারগাঁও বিদ্যুৎ কেন্দ্র। সোমবার বিকেলে কুমারগাঁওয়ে ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষে সিলেট সেনানিবাসের মেজর খন্দকার মো. মুক্তাদির ভয়াল বন্যায় পরিচালিত কর্মসূচির বর্ণনা দেন। তিনি সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, বিদ্যুৎ বিভাগসহ অন্যান্য সকল সরকারি দপ্তর ও সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান।

ব্রিফিংয়ে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বন্যার এই বিপদে যদি বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেত তবে আমরা নগরবাসী আরেকটি মহাসংকটের মধ্যে পড়ে যেতাম। আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তো। কেউ কারো কোনো খোঁজ নিতে পারতাম না। পানিবন্দি মানুষসহ নগরবাসীর দুর্ভোগ বেড়ে যেত অনেকাংশে। তাই অতিব জরুরি বিবেচনায় সিলেট সিটি কর্পোরেশন কুমারগাঁও কেন্দ্রটি সচল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। এই চেষ্টায় সিলেটের সকল প্রশাসন, দপ্তর, সংস্থাসহ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রসংশনীয় ভূমিকা পালন করে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্লাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সঞ্চালন অব্যাহত রাখার উপযোগী অবস্থায় রাখতে সক্ষম হয়। এজন্য আমি সিলেট জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী. বিদ্যুৎ বিভাগ, ফায়ার সাভির্স, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সিসিকের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই নগরবাসীকে, এই বিপদের সময় তারা ধৈর্যের সাথে নানাভাবে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।

এর আগে গতকাল সিলেটের উপশহরের বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্রে অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে সঞ্চালন উপযোগী করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে বরইকান্দির বিদ্যুৎ উপ-কেন্দ্র পরিদর্শন করেন সিসিক মেয়র এবং সেনাবাহিনীর একটি দল। তারা বন্যায় তলিয়ে থাকা বরইকান্দি কেন্দ্রটিতেও কুমারগাঁওয়ের মতো কৌশলে বাঁধ দিয়ে সেচের মাধ্যামে সঞ্চালন উপযোগী করতে কাজ শুরু করেছেন। সিসিক মেয়র বলেন, আশা করি মঙ্গলবার এটিও চালু করা সম্ভব হবে।

এছাড়া সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বন্যার্তদের খোঁজ নিতে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।