সিলেটের জৈন্তাপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় চার ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের করেছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
শনিবার (২০ জানুয়ারি) রাতে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. সালাহ্উদ্দিন মিয়া বাদী হয়ে জৈন্তাপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ২৫০ থেকে ৩০০ জন নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
ডা. মো. সালাহ্উদ্দিন মিয়া সিলেট ভয়েসকে বলেন, শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনার পর দুই বারে চারজনের মৃতদেহ নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক (ইএমও) হিল্লোল সাহা চারজনকেই মৃত বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে তারা আমাদের কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সের গায়ে হাত তুলেছেন, জরুরী বিভাগসহ হাসপাতালে ভাঙচুর করেছেন। এমনকি আমাদের আবাসিক কমপ্লেক্সে দফায় দফায় হামলা চালিয়েছেন। এসময় হাসপাতালের গ্যারেজের তালা ভেঙে সেখানে রাখা একটি এম্বুলেন্স ভাঙচুর করেন এবং অপর একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেন। তারা অন্তত দুই থেকে তিনশো লোক ছিলেন।
আরও পড়ুন : জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ‘ছাত্রলীগের তান্ডব’
ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে ডা. মো. সালাহ্উদ্দিন মিয়া বলেন, ‘সব মিলিয়ে ৯০ লাখ থেকে এক কোটি টাকার মত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমরা এখানে কাজ করতে নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছি।’
মামলা দায়েরের সত্যতা নিশ্চিত করে জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ এজাহার দায়ের করলে সেই অনুযায়ী মামলা নেয়া হয়েছে। (মামলা নং-০৯, তাং-২০/০১/২০২৪) এতে পেনাল কোডের ১৪৩/৪৪৭/৪৪৮/৩২৩/৩০৭/৪৩৬/৪২৭/৫০৬(২) ধারা রুজু করা হয়েছে। মামলার তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
অপরদিকে, হাসপাতাল ভাঙচুরের ঘটনা তদন্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলামের নেতৃত্বে এ প্রতিনিধি দল রবিবার হাসপাতাল পরিদর্শন করার কথা রয়েছে।
তবে নিহতের স্বজন ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ঘটনার পরপরই ওই চারজনকে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসার পর চিকিৎসায় অসহযোগিতা করা হয়েছে। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সেটি দেওয়া হয়নি। এ সময় উত্তেজিত জনতা ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গাড়ি ভাঙচুর করে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুরে বাংলাবাজার ২ নম্বর লক্ষ্মীপুর বায়তুল জামে মসজিদের সামনে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের পুকুরে পড়ে গেলে চার ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়।
নিহতরা হলেন- নিহাল পাল (২৬), জুবায়ের আহমদ সাব্বির (২৬), মেহেদী হাসান তামাল (২৫), সুমন আহমদ (২৫)।
শনিবার দুপুর ২টায় জৈন্তাপুর রাজবাড়ি মাঠে উপজেলার কমলা বাড়ির জুবায়ের আহসান, বড় পুকুরপাড় পানিয়ারাহাটির মেহেদী হাসান তমাল ও জাঙ্গালহাটির আলী হোসেন সুমনের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়। আর বিকাল ৪টার দিকে তোয়াসিহাটিতে বাড়ির পাশে নেহাল পালের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।