সিলেটের জৈন্তাপুরে থানার পার্কিংয়ে দামি ব্র্যান্ডের নম্বর প্লেট বিহীন একটি মোটরসাইকেল নিয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। গত তিন চারদিন ধরে সিসি ক্যামেরার সামনে প্রকাশ্যে নম্বর প্লেট বিহীন মোটরসাইকেলটি পার্কিং করে রাখা হলেও এর দায় নেননি কেউ।
অবশ্য ঘটনাটি জানাজানি হলে শুক্রবার (৭ জুন) রাতে থানায় গিয়ে গাড়িটি জব্দ করেন কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা। শনিবার (৮ জুন) আদালতে মোটরসাইকেলটি পাঠানো হয়েছে। তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
অভিযোগ ওঠেছে, জৈন্তাপুর থানা থেকে সদ্য বদলী হওয়া সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দীপক চন্দ্র সূত্রধর নিজে ব্যবহারের জন্য ভারত থেকে চোরাই পথে মোটরসাইকেলটি দেশে এনেছেন। তিনি বর্তমানে হবিগঞ্জে কর্মরত থাকায় গাড়িটি থানার ভেতরে পার্কিং করে রাখা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তিনি এটি নেওয়ার জন্য সিলেটে আসার কথা ছিল।
তবে, মোটরসাইকেলটি থানায় এনে রাখানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দীপক চন্দ্র সূত্রধর।
একটি সূত্র জানা গেছে, গত ২৫ মে জৈন্তাপুর থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দীপক চন্দ্র সূত্রধর হবিগঞ্জ জেলা পুলিশে বদলি হয়েছেন। বদলি হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজে ব্যবহারের জন্য জৈন্তাপুর কেন্দ্রী সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথে একটি দামি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল নিয়ে আসেন। আব্দুল করিম নামে এক চোরাকারবারি সীমান্ত পার করার পর মোটরসাইকেলটি জৈন্তাপুর থানায় নিয়ে আসেন কন্সটেবল সুলতান মাহমুদ ও সেলিম উদ্দিন। থানার পার্কিং রুমের ভেতরে এনে মোটরসাইকেলটি রাখেন তারা।
দুয়েকদিনের মধ্যে এএসআই দীপক চন্দ্র সূত্রধর হবিগঞ্জ থেকে এসে এটি নিয়ে যাওয়ার কথা। আপাতত এটি দেখাশোনা করছেন কন্সটেবল সুলতান মাহমুদ ও সেলিম উদ্দিন। শুক্রবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হলে কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা থানায় এসে মোটরসাইকেলটি জব্দ করেন
এদিকে, চোরাই মোটরসাইকেল ব্যবহারের জন্য থানার অভ্যন্তরে পার্কিং করে রাখার ঘটনায় তোপের মুখে পড়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম।
অভিযোগ ওঠেছে, এএসআই দীপক চন্দ্র সূত্রধর ওসি তাজুলের খুবই আস্থাভাজন ছিলেন। সীমান্তে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে ওসির ‘লাইনম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন দীপক চন্দ্র সূত্রধর। তার নেতৃত্বে জৈন্তাপুর থানায় একটি গ্রুপ গড়ে ওঠেছিল। এই গ্রুপে সদস্য হিসেবে রয়েছেন কনস্টেবল সুলতান মাহমুদ, সেলিম উদ্দিন, আব্দুল্লাহ আল মামুন ও শাহাদাত।
সূত্র জানায়, কন্সটেবল সুলতান ও সেলিম একই ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন। চোরাইপথে ভারত থেকে এনে ব্যবহার করছেন তারা। মোটরসাইকেলের নাম্বার প্লেটও ভুয়া।
সূত্র জানায়, ওসির আস্থাভাজন এই গ্রুপের সকল সদস্য পূর্বেও এক থানায় কর্মরত ছিলেন। তাজুল ইসলাম জৈন্তাপুর মডেল থানার ওসি হিসেবে যোগদানের পর কাকতালীয়ভাবে তারা আবার একইসাথে জৈন্তাপুর থানায় যোগদান করেন।
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর থানা থেকে সদ্য বদলী হওয়া পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দীপক চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ‘আমি গত মাসের ২৫ তারিখে হবিগঞ্জ বদলি হয়েছি। আমি এসব কিছু জানি না।’
ওসির ‘লাইনম্যান’ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অফিসের নির্দশনা মোতাবেক কাজ করি। ডিউটি টাইমে ডিউটি করি। এর বাইরে কোনো কিছু করি না।’
এ বিষয়ে জৈন্তাপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তাজুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাঁড়া দেননি।
এ ব্যাপারে কানাইঘাট সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার অলক কান্তি শর্মা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এরকম একটা সংবাদ পেয়েছি। থানায় গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে অবশ্যই বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তবে চোরাইমোটরসাইকেল জব্দের বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু সুফিয়ান বলেন, শুক্রবার রাতে মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়েছে। শনিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বিষয়টি জানার পর কানাইঘাট সার্কেলকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ সুপার। তদন্তে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।