সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলায় নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে অপরিকল্পিতভাবে আবাসিক এলাকার মাঝখানে বেশিরভাগ ক্রাশার মিলগুলো স্থাপন করা হয়েছে। নানা অভিযোগ সত্ত্বেও ক্রাশার মিলগুলোর বিরুদ্ধে যেন ব্যবস্থা গ্রহণের কেউ নেই। স্থানীয়রা ক্রাশার মিলগুলোর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন বরাবর গণস্বাক্ষরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন এলাকাবাসী।
একটি অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জৈন্তাপুর উপজেলার ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত আলুবাগান মোকামবাড়ী এলাকায় বছর কয়েক পূর্বে স্থাপন করা হয়েছিলজ মেসার্স মতিন কনস্ট্রাকশনের মালিকানাধীন মতিন স্টোন ক্রাশার মিল লিমিটেড নামের প্লান্ট। শুরু থেকেই উক্ত ক্রাশার মিলটি আবাসিক এলাকার অতি নিকটে স্থাপনে ক্রাশিংয়ের সময় কোনো পানির ব্যবহার না করার অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মোকামবাড়ী আলুবাগান মহল্লা আলুবাগান, মাঝহাঁটি, দাউদাটিল্লা এলাকার প্রবেশ মুখে ডাবল প্লান্টের বড় ক্রাশার মেশিন স্থাপন করা হয়। তিন-চারটি মহল্লায় হিন্দু মুসলিম মিলিয়ে প্রায় ২৫যটি পরিবার বসবাস করে। যে স্থানটিতে মিলটি স্থাপন করা হয় তার ২০০ মিটারের মত দূরত্বে সনাতন ধর্মাম্বীদের মন্দির রয়েছে। যেখান প্রতিদিন সকাল হিন্দু সম্প্রদায়ের শিশুদের প্রাক- প্রাথমিক স্কুলের ধর্মীয় শিক্ষা দেয়া হয়। তাছাড়া ক্রাশার মিলটি স্বয়ংক্রিয় অটোলোডেড সিস্টেম হওয়ার ফেলুডার যন্ত্র দিয়ে বিশাল আকৃতির পাথর লোড করা হয়। যাতে করে মধ্যরাতে বিকট আওয়াজে কেঁপে ওঠে এলাকার চারপাশ।
মোকামবাড়ী প্রাক-প্রাথমিক স্কুলের সনাতন ধর্মীয় শিক্ষিকা রিংকু রানী পাল বলেন, পূজামন্ডপ কিছুটা নিচে হওয়ায় প্রতিদিন বৃষ্টি মত ধূলোবালি মন্দিরে প্রবেশ করে। মিল মালিক কর্তৃপক্ষ একটুও পানি দেয় না বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
স্থানীয় গৃহিনী লাকি রানী পাল বলেন, আমার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা ভোর থেকে রাত ৮টা ও বেশি সময় পর্যন্ত এক নাগাড়ে মিল চালায়। ইতোমধ্যে আমার মেয়ের নিয়মিত মাথাব্যথা সমস্যা লেগেই থাকে। তাছাড়া অত্র মহল্লার অধিকাংশ শিশুরা শ্বাসকষ্ট ও চর্মরোগের আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানান তিনি।
মোকামবাড়ী দূর্গা মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক শ্রী নিত্য লাল বলেন, জৈন্তাপুর উপজেলায় বড় বড় দুইটি সমিতির অধীনে অনেক মিল চলে। আমরা দেখি প্রতিদিন সকালে মিল চালু করে সন্ধ্যা নামতেই বন্ধ করে দেয়। কিন্তু মতিন কনস্ট্রাকশনের মিলটি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না। বরং অদৃশ্য কোন প্রভাব খাটিয়ে যেমন-তেমনভাবে পরিবেশের ক্ষতি করে তারা মিল চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, রাত নয়টা দশটার পর মিল বন্ধ হলেও ফেলুডার দিয়ে পাথর লোডিং চলে। যার ফলে গভীর রাত পর্যন্ত বিকট শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা। যে স্থানটিতে মিলটি স্থাপন করা হয়েছে সেটা কথিত আছে সরকারি খাঁস ভূমি। এখানে কিভাবে মিল স্থাপন করা হলো জনমনে এখন সেই প্রশ্ন?
মোকামবাড়ী আলুবাগান এলাকায় ভারতীয় চুনাপাথর আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ী সৈয়দ শামীম আহমেদ বলেন, বার বার পানি দিয়ে মিল চালানোর কথা বললেও তারা এতে কোন কর্ণপাত করছে না। বরং অদৃশ্য কারণে গায়ের জোরে তারা পরিবেশ বিপর্যয় ঘটিয়ে ভোর থেকে রাত দশটা পর্যন্ত মিল চালায়। বর্তমান আলুবাগান এলাকায় একটি মিলের কারণে আশপাশের বনের গাছপালা ধূলায় সাদা হয়ে গেছে। একসময় এই এলাকাতে অনেকে পানের চাষ করতেন, সেটাও বাদ দিয়ে দিয়েছেন। অনেক সুপারী গাছ আছে ফলন আসার সাথে সাথে ডাস্টের কারণে ফলন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, এতোদিন তাদের প্রভাব ও ক্ষমতার দাপটে স্থানীয়রা চুপ থাকলেও এখন সোচ্চার হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা এখন তাদের শিশুদের ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে উক্ত স্থান হতে মতিন কনস্ট্রাকশনের মিলটি অপসারনের দাবী জানান। গত মঙ্গলবার পরিবেশ বিপর্যয় রোধে ও আলুবাগান মহল্লার মানুষের শান্তিতে বসবাসের জন্য স্থানীয়দের গণস্বাক্ষর নিয়ে একটি স্মারকলিপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর দাখিল করা হয়েছে।
মতিন কনস্ট্রাকশন ক্রাশার মিলের ম্যানেজার মাকসুদুর রহমানের নিকট স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মালিক কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না থাকায় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ক্রাশার মিলের সত্ত্বাধিকারী আবদুল ওয়াহেদের মোবাইল নাম্বার চাইলে তিনি তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে সালিক রুমাইয়া বলেন, মোকাবাড়ী আলুবাগান এলাকার স্থানীয়দের অভিযোগ তিনি পেয়েছেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ইতোমধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে বলে তিনি নিশ্চিত করেন।