বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সামরিক আদালতের সাজা কেন অবৈধ নয়, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জিয়ার আমলে সামরিক আদালতে দণ্ডপ্রাপ্তদের কেন দেশপ্রেমিক হিসেবে ঘোষণা করা হবে না এবং দণ্ডপ্রাপ্তদের পরিবারকে কেন পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন আদালত।
এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব রুল জারি করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
এছাড়াও রুলে দণ্ডিতদের সন্তানদের যোগ্যতা অনুয়ায়ী সরকারি চাকরি দেওয়ার বিষয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। মামলার বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল জিয়াউর রহমানের আমলে সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। রিট আবেদনে ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সামরিক আদালতে দণ্ডিতদের চাকরির স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত বেতন, অন্য সব সুবিধা, পেনশন পাওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
ওই সামরিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট সাইদুর রহমানের ছেলে মো. কামরুজ্জামান মিঞা লেলিনসহ বিমান বাহিনীর ১৪ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজাপ্রাপ্ত সেনা ও বিমান বাহিনীর কর্মকর্তাদের সন্তানসহ ৮৮ জনের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মতিউর রহমান রিট আবেদনটি দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ট্রাজেডির পর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসা জিয়া সেনাপ্রধান হওয়ার পর ১৯৭৬ সালে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে ক্ষমতা দখল করেন। তার পরের বছর তিনি রাষ্ট্রপতির পদও দখল করেন।
‘সেনাপ্রধান জিয়া ক্ষমতা দখলের পর সামরিক বাহিনীতে অনেকগুলো বিদ্রোহ-অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলেছিল, যাতে জড়িতদের সামরিক আদালতে বিচার করে মৃত্যুদণ্ডসহ নানা সাজা দেওয়া হয়েছিল। জেনারেল জিয়াউর রহমানের মার্শাল ল ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৭ -এর অধীনে সামরিক আদালতে অবৈধ দণ্ড এবং সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে সেই অবৈধ দণ্ডাদেশের সময় থেকে চাকরির স্বাভাবিক অবসরের সময় পর্যন্ত পদ-পদবী অনুযায়ী তাদের চাকরির সমস্ত বকেয়া বেতন ও অন্যান্য সকল সুবিধাসহ পেনশন না দেওয়া কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের যোগ্যতা অনুযায়ী কেন সরকারি চাকরি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির আরজি জানানো হয়।’
রিট আবেদনে আরও বলা হয়, ‘মার্শাল ল রেগুলেশন অ্যাক্ট-১৯৭৭’ দ্বারা সামরিক আদালতে জিয়াউর রহমান অন্যায়ভাবে বিচার করেছিল। সেই বিচারে যাদের ফাঁসি হয়েছিল, যাদের যাবজ্জীবনসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছিল এবং যারা চাকরিচ্যুত হয়েছিল সেসব ব্যক্তি এবং তাদের পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণের আওতায় আনা প্রয়োজন।
একইসঙ্গে রিটে বেআইনিভাবে যাদের সাজা দেওয়া হয়েছিল, তাদের যেন এই সাজা থেকে মাফ করে দেওয়া হয় এবং যারা মারা গেছেন তাদের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পোষ্যদের সরকারি চাকরিতে অ্যাকোমোডেট করার নির্দেশনা চাওয়া হয়।
রিটে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব ও বিমান বাহিনীর প্রধানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
পাশাপাশি রিট আবেদনে একটি সংবাদ প্রতিবেদন যুক্ত করা হয়। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর ভোররাতে বিমানবাহিনীতে সংঘটিত বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করা হয়েছিল। তখন সামরিক আদালতে ফাঁসি দেওয়া হয় ১১ জন অফিসারসহ ১ হাজার ৪৫০ জন বিমান সেনাকে। বরখাস্ত ও চাকরিচ্যুত হন আরও চার হাজার জন। নিখোঁজ হন অসংখ্য।