সাবেক অতিরিক্ত সচিব, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক ও প্রখ্যাত রম্য লেখক আতাউর রহমানের ভূমি জালিয়াতি করে অন্যজনকে লিখে দিয়েছেন সিলেটের ভূমি সহকারি সেটেলম্যান্ট কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাস।
এমন অভিযোগ এনে সোমবার দুপুরে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার রফিপুর গ্রামে বাসিন্দ ও আতাউর রহমানের আত্মীয় মালিক জুনেদ আহমদ।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমান আমার ভায়রা ভাই। তাঁর নিজের ভূমি সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে অন্যজনকে লিখে দিয়েছেন। কেবল আতাউর রহমান সাহেবের জমিই নয় কত শত মানুষের জায়গা-জমি অবৈধভাবে অন্যের নামে রেকর্ড করে দিয়েছেন তার হিসাব নেই।
তিনি বলেন, আতাউর রহমানকে ১৯৯৪ সালের ২১ মার্চ শাহজালাল উপশহরের জে ব্লকের ৪ নং রোডে (৫ কাটা বা সাড়ে ৮ শতক) ২৯ নম্বর প্লটটি ৯৯ বছরের জন্যে ইজারা দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ১৩ মে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ দখলপত্র আতাউর রহমানকে সমঝিয়ে দেন। ২০০৭ সালের ২৮ জুন প্লটটি আতাউর রহমানের নামে ইজারা দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে সিলেটের সাব-রেজিস্টারকে চিঠি দেন। এর প্রেক্ষিতে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিল নং- ৯১৩০/২০০৭। মাঠ পর্যায়ে জরিপ কার্যক্রম চলাকালে সরকারি চাকরির সুবাদে অন্যত্র কর্মরত থাকায় আতাউর রহমান প্লটটি নিজের নামে রেকর্ড করাতে পারেননি। মাঠ জরিপে এস.এ ১২৫ ও ১২৬ নম্বর দাগ হতে সৃষ্ট আর.এস ৪১২২ নং দাগে ৮ শতক ২৬ পয়েন্ট ভূমি জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ ও জনৈক তারা মিয়া গংদের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। পরবর্তীতে তিনি বাদী হয়ে উক্ত ভূমি তার নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্যে ১১ নং আর.এস ডিপি খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ৩৬০ নং আপত্তি এবং ১৭৪৮ নং আর.এস খতিয়ানের রেকর্ডিয় মালিক তারা মিয়া গংদের বিরুদ্ধে ৩৫৯ নং আপত্তি মামলা দায়ের করেন। ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি আপত্তি অফিসার মামলা দুটি খারিজ করে দেন। এরপর তিনি ৩১ বিধি অনুযায়ী খারিজ হওয়া দুটি মামলার বিরুদ্ধে আপীল করেন। সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার ও আপীল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর এই আপীল মামলার শুনানি করেন।
শুনানী শেষে ওই দিনই রায় ঘোষণা করে আতাউর রহমানের নামে ওই ভূমির রেকর্ড দিয়ে মহিতোষ চন্দ্র দাস নিজে স্বাক্ষর করে তাৎক্ষণিকভাবে রায় অনুযায়ী ৪১০৩ নং খতিয়ানে আতাউর রহমানের নামে রেকর্ড করে দিয়ে পর্চাও দিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জায়গার মালিক আতাউর রহমানের মৃত্যুর পর আমাকে (মালিক জোনেদ আহমদ) আমমোক্তার হিসেবে দেখতে পান আতাউর রহমানকে হাতে লিখে মহিতোষ চন্দ্র দাস যে খতিয়ান দিয়েছিলেন মুদ্রিত কপিতে এর কোনো অস্তিত্বও নেই। খতিয়ানে এই ভূমির মালিক হিসেবে জকিগঞ্জ উপজেলার ফুলতলা গ্রামের আব্দুল বারির পুত্র আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নাম রয়েছে। সম্পূর্ণ জালিয়াতির মাধ্যমে মহিতোষ চন্দ্র দাস ২য় বাদির নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। রায় পরিবর্তন করে তিনি সাবেক অতিরিক্ত সচিবের জায়গা আব্দুস শহীদ চৌধুরীর নামে রেকর্ড করে দেন। জালিয়াতির এবিষয়ে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়া যায়। গত ২১ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদনে অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমানের ভূমি কোনো আপত্তি বা মামলা ছাড়াই জালিয়াতির মাধ্যমে রায় পরিবর্তন করে অন্যের নামে দেয়ার বর্ননাও দেয়া হয়। এমনকি প্রতিবেদনে আপীল অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) দায়ি কর্মকর্তা হিসেবে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে এখনো কোন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
এছাড়াও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা মহিতোষ চন্দ্র দাস গোলাপগঞ্জে, সিলেট সদরে ও জগন্নাথপুর উপজেলায় জালজালিয়াতির মাধ্যমে একজনের জমি আরেকজনকে রেকর্ড, সরকারি খাস জমি বেহাত করা অসংখ্য অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে। আর হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। এরকম অসংখ্য অভিযোগে সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার মহিতোষ চন্দ্র দাস, মো. গিয়াস উদ্দিন, ধ্রæব রঞ্জন দেব বিশ্বাস ও রফিক মিয়াসহ সেটেলমেন্টের ৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সিলেটের আদালতে স্পেশাল মামলা হয়েছে। যা বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্তাধীন রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি অতিরিক্ত সচিব আতাউর রহমানের ভূমি ফেরত ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তিনি প্রধানমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী, দুদকসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।