সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসাইনকে জালিয়াতি মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
গত ২৯ মার্চ সিআর ৬৪/২২ মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে সেখানেই সাবেক কাউন্সিল দেলোয়ার হোসাইন ও কাজী আমিনুল ইসলামকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়।
জানা যায়, ২০১৬ সালে দেলোয়ার হোসাইন কাউন্সিলর ও মো. আব্দুল মনাফ মেয়র থাকাকালীন সময়ে পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের হবিবপুর মাঝপাড়া এলাকার বাসিন্দা মধুমালা বেগম নামে ৭৫ বছর বয়সী এক বৃদ্ধাকে মিথ্যা তালাকপ্রাপ্ত ওয়ারিশান সার্টিফিকেট দেন।
ভুক্তভোগী মধুমালা বেগম এ ব্যাপারে জানতে পৌরসভায় গেলে বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলরের সাথে এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। কিন্তু বর্তমান মেয়র ও কাউন্সিলর বলেন, ওই ওয়ারিশান সার্টিফিকেট আমাদের দেওয়া নয়। এটা আমাদের পৌরসভা থেকে দেওয়া হয়েছে কিন্তু এটা আমরা থাকাকালীন বা আমরা কেউ দেইনি। সাবেক কাউন্সিলর ও মেয়র এটি দিয়েছিলেন।
এ ব্যাপারে বর্তমান কাউন্সিল কামাল হোসেন বলেন, আমরা উপযুক্ত প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত এই ওয়ারিশান সার্টিফিকেটটি পরিবর্তন করে দিতে পারছি না।
এরপর এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মধুমালা বেগম বাদী সুনামগঞ্জ আমল গ্রহণকারী জুডিসিয়াল হাকিম আদালতে জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোছা. তয়রুন নেছা (৬২), যুক্তরাজ্য প্রবাসী শাহিন মিয়া (৪৫), যুক্তরাজ্য প্রবাসী মো. বাদশা মিয়া (৪০), সাবেক কাউন্সিলর মো. দেলোয়ার হোসাইন (৪০) ও কাজী আমিনুল ইসলাম।
আদালত মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য জগন্নাথপুর থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওসি তদন্ত করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তা সুশংকর পালকে দায়িত্ব দেন। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন তিনি।
তদন্তকারী কর্মকর্তা সুশংকর পাল বলেন, কোর্ট থেকে সি আর ৬৪/২২ আদালত মামলা তদন্ত করার জন্য দিলে আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সাবেক কাউন্সিলর দেলোয়ার হোসাইন ও কাজী আমিনুল ইসলাম আদালতে হাজিরা দিতে গেলে আমল গ্রহণকারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সুনামগঞ্জ (জগন্নাথপুর) ইশরাত জাহান তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহিন মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জালিয়াতি ও প্রতারণা মামলায় সাবেক কাউন্সিল দেলোয়ার হোসাইন ও কাজী আমিনুল ইসলামকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি আসামিরা পলাতক রয়েছেন।
ভুক্তভোগী মধুমালা বেগম জানান, তিনি মৃত জমির মিয়ার প্রথম স্ত্রী এবং তাদের ০৫/১০/১৯৬৪ ইংরেজি তারিখে বিয়ে হয়। ২০০২ সালে জমির মিয়া মৃত্যুবরণ করেন।
তিনি বলেন, আমাকে আমার স্বামী তালাক দেননি। আমার প্রতিপক্ষ ভুয়া তালাকনামা তৈরি করে। আইনি নিয়মে ও রেজিস্ট্রেশন কাবিন মূলে বিয়ে হয় এবং পরবর্তীতে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জন্ম হয়। পরবর্তীতে আমার এবং আমাদের পরিবারের সকলের অজ্ঞাতসারে আমার স্বামী ১ নম্বর বিবাদী তয়রুন নেছাকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার গর্ভে ৩ পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত আমি সামাজিক এবং পারিবারিক মান-মর্যাদা নিয়ে স্বামীর সংসারে দাম্পত্য জীবন যাপন করি। বেশ কিছুদিন পূর্ব থেকে ১ ও ৩ নম্বর বিবাদী প্রচার করতে থাকে যে আমার স্বামী আমাকে তালাক প্রদান করেছেন। তারা জাল ওয়ারিশান সার্টিফিকেট এবং জালিয়াতির কাগজ দেখিয়ে গ্রামের অনেক মানুষের কাছে এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছে বলতে থাকে ১৯৯১ সালে নাকি আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছেন। আমি যখন পৌরসভা থেকে এটা জানতে পারলাম, তখন আমি বাধ্য হয়ে আইনের আশ্রয় নিই। আইনের কাছে আমি সুবিচার পাওয়ার আশা করি।