রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ ২২৪ নেতা-কর্মীর জামিন ফের নাকচ করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম মো. শফিউদ্দিন আজ সোমবার (১২ ডিসেম্বর) উভয়পক্ষের শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
মির্জা ফখরুলসহ ১৩৮ জনের জামিনের আবেদন করা হয় গতকাল রোববার। এরপর আরও ৮৬ জনের জামিনের আবেদন করা হয়। ২২৪ জনের জামিনের আবেদন আজ বেলা আড়াইটায় শুনানি শুরু হয়। ২ ঘণ্টা শুনানির পরে মির্জা ফখরুলসহ ১১ জনের বিষয়ে পরে আদেশ দেওয়া হবে বলে জানান আদালত। এরপর ২১৩ জনের জামিন আবেদন তাৎক্ষণিকভাবে নামঞ্জুর করা হয়। পরে হাকিম খাস কামরায় গিয়ে মির্জা ফখরুলসহ ১১ জনের জামিন আবেদনও নাকচ করেন।
আরও যাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস ছালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সেলিম রেজা হাবিব।
গত ৮ ডিসেম্বর গভীর রাতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে তাঁদের নিজ নিজ বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরদিন শুক্রবার পল্টন থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের আদালতে পাঠানো হলে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। অন্যদের গত বুধবার সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনের কার্যালয় থেকে আটক করা হয়। এই মামলায় মোট ৪৫৩ জন বর্তমানে কারাগারে আছেন। গত বৃহস্পতিবার পল্টন থানার উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
সোমবার ঢাকা সিএমএম আদালতে জামিন শুনানিতে অংশ নেন সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন, আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার, মো. বোরহান উদ্দিন, জয়নাল আবেদীন মেজবাহ প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে জামিনের বিরোধিতা করেন ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু, ঢাকা জেলা পিপি শেখ হেমায়েত হোসেন প্রমুখ।
বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শুনানিতে বলেন, এই মামলায় যে ঘটনা দেখানো হয়েছে প্রকৃতপক্ষে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ বানচাল করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপিকে দমন-নির্যাতনের অংশ হিসেবে গায়েবি মামলা করা হচ্ছে।
তাঁরা আরও বলেন, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের নাম মামলার এজাহারে নেই। তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্যই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সমাবেশের পর এখন তাঁদের কারাগারে আটক রাখার কোনো যুক্তি নেই।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসই হলেন এই ঘটনার মূল নির্দেশদাতা। রাজনৈতিক সমাবেশ এবং রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে একের পর এক পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সদ্য ধৃত, এই মুহূর্তে জামিন দেওয়ার কোনো যুক্তি নেই। জামিনের বিরোধিতা করে আরও বলা হয়, মামলাটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের। সম্পূর্ণ অজামিনযোগ্য ধারার মামলা। কাজেই তাদের জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করা হোক।