জামালপুরের ডিসির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসির চিঠি

জামালপুরের জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. আশাদুল হকের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়েছে।

এর আগে, সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকালে মাদারগঞ্জে নবনির্মিত পৌর ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে ভোট চান জামালপুরের নবনিযুক্ত ডিসি ইমরান আহমেদ। তার এ বক্তব্যের ভিডিও ও অডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জেলা প্রশাসকের একই ধরনের বক্তব্যে জেলাজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

ওই অনুষ্ঠানে জামালপুরের জেলা প্রশাসক ইমরান আহমেদ বলেন, আমাদের একটা জিনিস মনে রাখতে হবে। আমাদের অনেক কষ্টের অর্জিত এই স্বাধীনতা। আমাদের এই স্বাধীনতার সুফল হলো আজকের যোগাযোগ ও উন্নয়ন। এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

তিনি বলেন, ‘যে সরকার এই উন্নয়ন করেছে, এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে হলে সেই সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনতে হবে; এটা হবে আমাদের অঙ্গীকার।’ তিনি উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা এই সরকারের প্রতি অসহযোগিতা করবেন না।

এর প্রেক্ষিতে বুধবার মন্ত্রি পরিষদ সচিবকে চিঠি দিয়ে জেলা প্রশাসকের বক্তব্য দেওয়ার ঘটনাটি সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. ইমরান আহমেদ স্থানীয় সংসদ সদস্য মির্জা আজমের উপস্থিতিতে জনবহুল এক সভায় বক্তব্য রেখেছেন। বক্তব্যে তিনি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আওয়ামী লীগ সরকারকে পুনরায় নির্বাচিত করে ক্ষমতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য মির্জা আজমকে আগামী নির্বাচনের পর মন্ত্রী হিসাবে দেখার আশা প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরকে পক্ষপাতহীন নিরপেক্ষ আচরণ করতে হবে। এটি সংবিধান ও সংশ্লিষ্ট সব আইনের অর্থ ও অর্ন্তনিহিত চেতনা। সংবিধানের ১২০ ও ১২৬নং অনুচ্ছেদ এবং গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৫ ও ৯১ (গ)নং অনুচ্ছেদসহ আরও বিভিন্ন আইন ও ধারায় এ বিষয়টি সুষ্পষ্ট। নির্বাচন বিষয়ে কমিশনের এখতিয়ার কেবল তফসিল ঘোষণার পর নয়, সব সময় বিদ্যমান থাকে।

এতে বলা হয়, জেলা প্রশাসকরা সাধারণত রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করে থাকেন এবং নির্বাচনের সময় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করে থাকেন। বর্ণিত অবস্থাধীনে সরকার, গণতন্ত্র, নির্বাচন ব্যবস্থা এবং নির্বাচন কমিশনের ওপর জনমানুষের আস্থা অক্ষুণ্ণ রাখার স্বার্থে মো. ইমরান আহমেদকে ওই ঘটনার সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া এবং আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনোরূপ নির্বাচনি দায়িত্ব প্রদান করা থেকে বিরত রাখা সমীচীন হবে এবং একই সঙ্গে জেলা প্রশাসকদেরকে এ ধরনের আচরণ থেকে বিরত থাকতে সতর্কবার্তা দেওয়া প্রয়োজন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে ডিসি ভিডিওতে যা বলেছেন তা খতিয়ে দেখা হবে। নির্বাচন সামনে নিয়ে এখন একজন ডিসি এমন কথা বলতে পারেন না। তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে মাঠে পাঠানো হয়।