দীর্ঘ ৩৪ বছর ইমামতি শেষে অবসর নিয়েছেন হযরত মাওলানা আব্দুর রহমান। তার বিদায়কে জাঁকজমকপূর্ণ ও স্মরণীয় করে রাখলেন সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের পশ্চিম কারিনগর জামে মসজিদের পরিচালনা কমিটি ও এলাকার মানুষ।
শুক্রবার (১৪ জুলাই) বাদ জুম্মা মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা আব্দুর রহমান’র অবসরকালীন বিদায় উপলক্ষে সংবর্ধনার অয়োজন করেনেএলাকাবাসী। মাওলানা আব্দুর রহমান সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের বাঘেরখাল গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে। যুবক বয়সে ইমামতি ও এলাকার মক্তবে পড়ানো শুরু করে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ৫৮ বছর বয়সে অবসর নিয়েছেন তিনি। বিদায়কালে মসজিদ কমিটি ও এলাকার মানুষ তাকে অর্থ, উপহার সামগ্রী ও অবসরকালীন বিদায় সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করলেন।
পশ্চিম কালিনগর গ্রামের মুরব্বি হাফিজ মিয়ার সভাপতিত্বে ও বন্ধন সমাজ কল্যান যুব সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিপন আহমেদের পরিচালনায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট মুরব্বি আবুল মিয়া।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামসুল আলম, মাওলানা সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পশ্চিম কালিনগর জামে মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. দেলওয়ার হোসেন।
এ সময় গোয়াইনঘাটের বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসার ইমাম, খতিব ও শিক্ষকসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট মুরুব্বি ও সমাজসেবক আবুল মিয়া বলেন, একজন সাদা মনের মানুষ ইমাম আব্দুর রহমান। একই মসজিদে এত বছর তিনি ইমামতি করছেন, অথচ কারও সঙ্গে তাঁর কোনো মনোমালিন্য হয়নি। তিনি বয়সের ভারে ইমামতি ছাড়তে চাইলেও গ্রামবাসী তাঁকে এতদিন ছাড়েননি।
গ্রামের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইমাম আব্দুর রহমান বার্ধক্যের করণে অবসর নিয়েছেন। গ্রামবাসী তাঁকে না জানিয়েই বিশাল আয়োজনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। তাঁরা চেয়েছিলেন এমন একজন মহৎ ব্যক্তির বিদায় অনুষ্ঠান যেন স্মরণীয় হয়ে থাকে। তাই তাঁরা সুসজ্জিত আয়োজনে বিদায় অনুষ্ঠানের অয়োজন করেন। সেখানে নানা বয়সী মানুষ স্মৃতিচারণা করেন।
এমন বিদায় সংবর্ধনায় অভিভূত মাওলানা আব্দুর রহমান বলেন, অনেক কম বয়সে মসজিদটির ইমামতি শুরু করেছিলেন। তাঁকে যাঁরা ইমামতিতে নিয়েছিলেন, সেসব মুরব্বিদের বেশিরভাগই আজ আর বেঁচে নেই। তবে তাঁদের সন্তানেরা, গ্রামের অন্যরা তাঁকে ভালোবাসেন ও শ্রদ্ধা করেন।
মসজিদ কমিটির সভাপতি ও মোতোয়ালি মো. দেলওয়ার হোসেন বলেন, মাওলানা আব্দুর রহমান তাঁদের গ্রামেরই একজন ও পরম আপনজন হয়ে ছিলেন। তিনি ছিলেন আমাদের অভিভাবকের মতো। আমাদের সমাজের বয়োজেষ্ঠ্য ময়মুরুব্বীদের নিয়োগের মাধ্যমে দীর্ঘ ৩৪ বছর অত্র এলাকার মানুষের সাথে নিবিড় সুসম্পর্কের মাধ্যমে হুজুর তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আমার দেখা মানুষের সাথে এ চমৎকার সু-সম্পর্কের নেপথ্যে ছিল হুজুরের রাগ, হিংসা, লোভ ও অহংকার মুক্ত থাকা। আমরা হুজুরের কর্মময় জীবনকে অনুকরণীয় হিসাবে স্বীকৃতি দিচ্ছি।
উল্লেখ্য, মাওলানা আব্দুর রহমান দাওরায়ে হাদিস পাস করে ১৯৮৯-২০২৩ ইং পর্যন্ত পশ্চিম কালিনগর জামে মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন।