সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলংয়ে বাংলাদেশ টুরিজম বোর্ড এর অর্থায়নে নির্মানাধীন জেলা পর্যটন ব্রান্ডিংশপ ভবনের ভূমির মালিকানা নিয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের মধ্যে বিবাদ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বন বিভাগের সারী রেঞ্জ সংরক্ষিত বনভূমি জানিয়ে গত ৩০ মে নির্মাণ কাজে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে সরকারের খাস ভূমি দাবি করে পুনরায় নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে দুপক্ষের বিবাদ পরিস্থিতিতে চলছে চিঠি আদান প্রদান।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জাফলংয়ের রহমতপুর এলাকায় একটি পাকা ভবন নির্মাণ কাজ করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তারা জানান, গোয়াইঘাট উপজেলার আওতাধীন একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করছেন তারা।
গোয়াইানঘাট উপজেলা প্রশাসনের দাবি, জাফলং পর্যটনের উন্নয়নে ও সিলেট জেলার ঐতিহ্যবাহী পণ্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে জেলা পর্যটন উন্নয়ন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে চৈলাখেল ৩য় খন্ড মৌজার ১৩৯ দাগের ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত জমিতে জেলা ব্রান্ডিং শপ নির্মাণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ করছে বন বিভাগ সিলেট। সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান ও অসৌজন্যতামূলক আচরণের বিষয়টি জেলা প্রশাসক, সিলেট ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
এছাড়া জাফলং বিটের “চৈলাখেল ৩য় খন্ড” মৌজাটি বনবিভাগের ৪ধারার ভূমি উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রকাশিত ৪ধারার গেজেটের কোথাও “ছৈলাখেল ৩য় খন্ড” নামে কোন মৌজা উল্লেখ নেই। গেজেটে উল্লেখিত “চৈলাখেল” পার্শ্ববর্তী জৈন্তাপুর উপজেলার অন্তর্গত মৌজা।
বন বিভাগ সিলেটের সারী রেঞ্জ সূত্রে জানা যায়, সারী রেঞ্জাধীন জাফলং বিটের আওতাধীন চৈলাখেল ৩য় খন্ড মৌজার এস,এ দাগ নং ১৩৯ যাহা বি,এস দাগ নং ১৪০ দাগে ৪ ধারা বনভূমি। ১৯৬৭ সালের গেজেট ভুক্তিতে ভুলবসত ছৈলাখেল মৌজা গোয়াইনঘাট পুলিশ স্টেশনের পরিবর্তে জৈন্তাপুর পুলিশ স্টেশন লেখা হয়। পরবর্তীতে ১৯৭৬ সালে কৃষি মন্ত্রনালয় ভুলটি সংশোধন করে। উপজেলা প্রশাসন চৈলাখেল মৌজার উক্ত ভূমিকে ১ নং খাস খতিয়ানের ভূমি দাবী করে পাকা ভবন নির্মাণ করছে যা অবৈধ। বিধান রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রাস্তা বা কোন উন্নয়নমুলক কাজ করার প্রয়োজন হলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রনালয়, বন ও অধিদপ্তরের সাথে আলোচনার মাধ্যমে বন অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা অনাপত্তিপত্র নেয়ার বিধান থাকলেও সেটি করেনি উপজেলা প্রশাসন।
বন বিভাগের সারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসনকে কাগজপত্রসহ লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আমরা আশা করছি বিষয়টি আমলে নিয়ে এই নির্মাণ কাজটি বন্ধ করা হবে।
পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ব্রান্ডিং শপের ভবন এলাকাটি চৈলাখেল ৩য়খন্ড মৌজা। বিভিন্ন সময় এর আশেপাশে বন বিভাগ অবৈধ দখল উচ্ছেদ করেছে। অব্যবহৃত জায়গায় পর্যটন ব্রান্ডিংশপ স্থাপন একটি ভালো উদ্যোগ। এ উদ্যোগের সফলতায় ভূমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তি প্রয়োজন।
গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, গোয়াইনঘাট উপজেলার ১ নং খাস খতিয়ানের ভূমিতে নির্মান হচ্ছে জেলা পর্যটন ব্রান্ডিংশপের ভবন। এই নিয়ে বন বিভাগ ও আমাদের মধ্যে একটু ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল। এখন এটা সমাধান হয়েছে। ডিএফও সাহেবের সাথে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। আমরা সম্বন্নয় করে আবারো মিটিং করবো। যেন এ বিষয়ে আর কোনো জটিলতা সৃষ্টি না হয়। এখন আর ভবন নির্মাণে কোনো বাধা নেই।