জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হকের (চুন্নু) বিরুদ্ধে দলে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন ৬৬৮ জন নেতা-কর্মী। একই সাথে জাপার বর্তমান নেতৃত্বকে বাদ দিয়ে নতুন করে দল গঠনের ঘোষণাও দিয়েছেন তারা।
পদত্যাগকারী এই নেতাকর্মীরা ঢাকা মহানগর উত্তরের ৯টি থানা ও এর আওতাধীন বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটিতে রয়েছেন। থানাগুলো হচ্ছে হাতিরঝিল, মোহাম্মদপুর, শেরেবাংলা, আদাবর, তেজগাঁও, পল্লবী, মিরপুর, বাড্ডা ও রূপনগর।
বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তন কেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জাপার এই নেতাকর্মীরা তাঁদের গণপদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করেন। নেতাকর্মীদের পদত্যাগের নেতৃত্ব দেন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম। তবে জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের সিদ্ধান্তে সম্প্রতি তাঁকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জি এম কাদের মনে করেন জাতীয় পার্টি একটি মুদি দোকান। তিনি সকালে কার্যালয়ে আসেন, সন্ধ্যায় ফিরে যান। তাঁর একটি ফোরাম আছে, ফাঁদ আছে, তাঁর নির্ধারিত কিছু লোক সারা দিন দোকানদারি করে তাঁকে হিসাব দেন। হিসাব নিয়ে তিনি বাসায় ফিরে যান। সারা দেশে তিনি একটি সভা-সমাবেশও করেননি।
আরও পড়ুন : জাপা থেকে বহিষ্কৃত ইয়াহইয়া চৌধুরীর পদত্যাগ
জি এম কাদেরের উদ্দেশে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দল হচ্ছে এরশাদের। আমরা এরশাদের আদর্শের সঙ্গে আছি। এই আদর্শ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাব। যদি কোনো বাধা দিতে আসেন, বাধা দিয়ে পারবেন না। এই দল করার যোগ্যতা আপনার নাই। আমরা তাঁর নেতৃত্বে দল করব না।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম পাঠান। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জাপা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুনীল শুভরায়সহ জাপা কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা মহানগর উত্তর জাপার বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর আলম পাঠান বলেন, ‘আমরা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে বিপর্যস্ত সংগঠনে অবস্থান করে এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ধ্বংস দেখতে চাই না। তাই জি এম কাদেরের সংগঠন থেকে গণপদত্যাগের ঘোষণা করছি। একই সঙ্গে অল্প সময়ের ব্যবধানে নতুন করে জাতীয় পার্টি গঠন করে আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব।’
উল্লেখ্য, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগিতে ২৬টি আসন পেয়েছিল। এ ছাড়া সারা দেশে ২৬৫ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল দলটি। কিন্তু সমঝোতার আসনের মধ্য থেকেই মাত্র ১১টি আসনে জাপা প্রার্থীরা জয়ী হন।
নির্বাচনে ঢাকায় পরাজিত প্রার্থীদের একটা অংশ ভোটে দলের ভরাডুবির পর শীর্ষ নেতাদের পদত্যাগ দাবি করে জাপা কার্যালয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন। পরে তাঁরা সারা দেশের পরাজিত প্রার্থীদের নিয়েও একটি সভা করে জাপার নেতৃত্বের সমালোচনা করেছিলেন। এমন কর্মকাণ্ডের জন্য কয়েকজন নেতাকে জাপা থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হয়।