জলের ‘আফালে’ হাওর তীরবর্তী গ্রামবাসীর নির্ঘুম রাত

ভারতের মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টির ফলে পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। মাটিয়ান ও শনির হাওরের আফালে (ঢেউ) হাওর তীরবর্তী ঘরবাড়ি রয়েছে ভাঙন হুমকিতে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের লোকজন।

এসব বানভাসী লোকজন তাদের গৃহ পালিতপশু নিয়েও পড়েছে বিপাকে। ঢলে ভেসে গেছে অর্ধ শতাধিক পুকুরের মাছ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক পাঠদান। ভেঙে পড়েছে বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা।

এদিকে উপজেলার যাদুকাটা, রক্তি ও বৌলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে গ্রামীণ রাস্তাঘাট তলিয়ে ঘরবাড়িতে প্রবেশ করেছে। বন্ধ হয়ে পড়েছে উপজেলা সদরের সাথে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাছাড়া তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের কয়েকটি অংশ পানির নিচে থাকায় জেলা শহরের সাথে উপজেলার যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাদুকাটা নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোও রয়েছে হুমকির মুখে। তবে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে উপজেলার প্রধান নদী যাদুকাটার পানি এখনো বিপদসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বাদাঘাট ইউনিয়নের মল্লিকপুর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব মল্লিক জানান, ‘টানা বৃষ্টিতে আর পাহাড়ি ঢলে গ্রামের অধিকাংশ ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পুকুরের ৫০ হাজার টাকার পোনা মাছ নিয়ে ভয়ে আছি। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে কি হবে জানি না।’

তাহিরপুর সদর ইউনিয়নের রতনশ্রী গ্রামের বাসিন্দা ময়নাবিবি বলেন, ‘হাওরের আফালে ভিটেমাটির শেষ রক্ষা করতে পারিনি। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে নির্ঘুম রাত পার করেছি। এখন কোথায় উঠব চিন্তায় পড়েছি।’

উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলী হায়দার বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের ছোট-বড় অন্তত ৩৫টি গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে অসহায় অবস্থায় দিন পার করছেন। বয়স্ক লোকজন, নারী ও শিশুরা বেশি আতংকে ভোগছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো অবনতির দিকে যাবে।’

উপজেলার আমবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে গেছে এবং বিদ্যালয়ে চলাচলের সব কয়টি সংযোগ সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা এখন ছোট ছোট নৌকা দিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করছে।

তাহিরপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুনাব আলী বলেন, মাটিয়ান ও শনির হাওরের আফালের (ঢেউ) কবল থেকে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে হাওরতীরবর্তী লোকজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। যেকোন সময় আফালের কবলে এসব ঘরবাড়ি হাওরের গর্ভে তলিয়ে যাবার শঙ্কা করছেন এসব হাওরতীরবর্তী লোকজন।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রায়হান কবির বলেন, হাওরের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সবাইকে মনোবল শক্ত রাখার অনুরোধ করছি। আর বন্যাআশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত আছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে পানিবন্দি মানুষের পাশে থেকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।