বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচে ৯৩ রানের জয় পেয়েছে ইংল্যান্ড। তাদের সাথে বড় হার দিয়েই এবারের বিশ্বকাপ মিশন শেষ করল পাকিস্তান। তবে দুটি দলই প্রথম রাউন্ড থেকেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে।
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংস শেষেই জানা হয়ে গিয়েছিল, বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলা হচ্ছে না পাকিস্তানের। সেমিফাইনালে যেতে হলে ইংল্যান্ডের ছুঁড়ে দেওয়া ৩৩৮ রানের লক্ষ্য পাকিস্তানকে পেরুতে হতো ৬.৪ ওভারে। অসম্ভব সেই সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে তাই বিশ্বকাপ মিশনকে গুডবাই বলতে হয়েছে বাবর আজমদের। এরপরের লক্ষ্য ছিল ন্যূনতম জয়। শেষ ম্যাচে স্বান্তনার জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করতে চেয়েছে পাকিস্তান।
কিন্তু ইংলিশ বোলারদের তোপের মুখে হয়নি সেটিও। ৩৩৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে পাকিস্তান অলআউট হয়েছে ২৪৪ রানে। তবে পাকিস্তান এটুক স্বান্তনা পেতে পারে, অন্তত আফগানিস্তানের নিচে নামতে হয়নি তাদের। ১৮৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা পেরিয়ে যাবার পর নিশ্চিত হয়েছে আফগানদের উপরে থেকেই বিশ্বকাপ শেষ করছে তারা। যদিও ম্যাচটা পাকিস্তান হেরেছে ৯৩ রানে।
৩৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ঠিক যেমন শুরু দরকার ছিল, তেমনটা পায়নি পাকিস্তান। রানের খাতা খোলার আগেই আব্দুল্লাহ শফিক ফিরে গিয়েছেন। বিশ্বকাপের পরেই অবসরের ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ডেভিড উইলি। সে হিসেবে আজ তার শেষ ম্যাচ। আর তিনি সেটা স্মরণীয় করে রাখলেন প্রথম ওভারেই উইকেট তুলে নিয়ে।
আশা ভরসার প্রতীক ছিলেন ফখর জামান। আগের দিন অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় এই ব্যাটারের উপরেই নির্ভর করতে হবে বলে মন্তব্য করেছিলেন বাবর আজম। হতাশ করেছেন তিনিও। ৯ বলে ১ রান করে উইলির দ্বিতীয় শিকার হন ফখর। এরপরে জুটি গড়েছেন পাকিস্তানের দুই বড় ভরসা বাবর আজম এবং মোহাম্মদ রিজওয়ান। কিন্তু এই জুটিও আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় উইকেটে ৫১ রান তোলার পরেই দলীয় ৬১ রানে ফিরে যান বাবর। গাস অ্যাটকিনসনের বলে আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
দলের রান যখন ঠিক ঠিক ১০০ তখনই মঈন আলীর বলে বোল্ড হন রিজওয়ান। পাকিস্তানের পরাজয় ততক্ষণে চোখ রাঙাতে শুরু করেছে। এরপর সৌদ শাকিলের ২৯ রান পাকিস্তানকে দিয়েছে সাময়িক স্বস্তি। ইফতিখার আহমেদ ফিরেছেন ৩ রানে। শাদাব খানও ইনিংস বড় করতে পারেননি। মঈন আলী আর রশিদ খানের ঘূর্ণিতে তখন দিশেহারা পাকিস্তান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ক্রিজে ছিলেন সালমান আগা। তার পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংস নিশ্চিত করেছে পাকিস্তানের ৫ম স্থান। উইলির তৃতীয় শিকার হয়ে সালমান ফিরে গেলে পাকিস্তানের পরাজয় হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার।
শেষে এসে অবশ্য পাকিস্তানের দুই বোলার হারিস রউফ আর ওয়াসিম জুনিয়র শুরু করেন নতুন এক ঝড়। ৩৩ বলেই ৫৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন এই দুই বোলার। তাতে অবশ্য খুব একটা ক্ষতি হয়নি। পাকিস্তান ম্যাচ হেরেছে ৯৩ রানের ব্যবধানে।
এর আগে কলকাতায় ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ইংলিশদের ইনিংস থেমেছে ৩৩৭ রানে। এদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পায় ইংল্যান্ড। উদ্বোধনী জুটিতে আসে ৮১ বলে ৮২ রান। এই ম্যাচের আগেই অবসরের ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন ইংলিশ ওপেনার ডেভিড মালান। নিজের সম্ভাব্য শেষ ম্যাচ খেলতে নেমে বেয়ারস্টোর সঙ্গে জুটি গড়ে দেখেশুনেই খেলছিলেন। তবে ১৪তম ওভারে ইফতিখার আহমেদের বলে সাজঘরে ফেরেন ৩৯ বলে ৩১ রান করে। এরপর অবশ্য বেশিদূর এগোতে পারেননি জনি বেয়ারস্টো। ৬১ বলে ৫৯ করে হারিস রউফের বলে আউট হন ইংলিশ এই ওপেনার।
বিশ্বকাপজুড়ে ইংল্যান্ডকে ভুগিয়েছে তাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। আজ যেন চেনা ছন্দে ফিরেছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে জো রুট এবং বেন স্টোকস মিলে যোগ করেন ১৩১ বল থেকে ১৩২ রান করেন। তাতে দলীয় সংগ্রহ দুইশ ছাড়ায়।
৪১ তম ওভারে শাহিন আফ্রিদি যখন ব্রেকথ্রু এনে দিলেন, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে পাকিস্তানের। আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান স্টোকস এদিন ৭৬ বলে ৮৪ রান করেন। স্টোকসের পর রুটকেও সাজঘরে পাঠান শাহিন। শেষ পর্যন্ত হ্যারি ব্রুক (৩০ রান) ও অধিনায়ক জস বাটলারের (২৭ রান) ছোটখাটো ক্যামিওতে ইংল্যান্ডের রান তিনশ’ ছাড়িয়েছে।
ইংল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৪ রান আসে স্টোকসের ব্যাট থেকে। আর পাকিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চে ৩ উইকেট তুলে নেন হারিস রউফ ও ২টি করে উইকেট শিকার করেন শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।