‘আমি আর্জেন্টিনার জার্সি পরতে পেরে গর্বিত এবং আমি যে দেশটিতে জন্মগ্রহণ করেছি তাকে ভালোবাসি। আমি মরার আগ পর্যন্ত জার্সিটির সম্মান রক্ষা করব এবং সর্বদা নিজের সর্বোচ্চটুকু উজার করে দিতে প্রস্তুত। কখনও কখনও জিনিস পক্ষে আসবে, কখনও বিপক্ষে। কিন্তু আমি কখনো লুকিয়ে যাবো না। এটাই আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে।’
প্রি কোয়ার্টারের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাঠে নামার আগে গণমাধ্যমে এভাবেই নিজের ভাবনা প্রকাশ করেছেন আর্জেন্টিনার খেলোয়াড় রদ্রিগো ডি পল। বলার অপেক্ষা রাখে না, নিজের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলার আগে রদ্রিগোর শরীরে বয়ে যাচ্ছে এক গ্ল্যাডিয়েটরের রক্ত। মাথায় শুধুই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দেওয়ার চিন্তা। জয়ের নেশায় মগ্ন থাকা এ মিডফিল্ডার জীবন দিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে প্রস্তুত।
একটু ভুল করলেই সর্বনাশ। বিদায় নিতে হবে বিশ্বকাপ থেকে। এমন সমীকরণ মাথায় রেখে শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ১টায় আহমেদ বিন আলী স্টেডিয়ামে মাঠে নামতে যাচ্ছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা।
বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হোঁচট খাওয়ার পর আলবিসেলেস্তেদের জন্য প্রতিটি ম্যাচই নক আউট! মেক্সিকোর বিপক্ষে জিততেই হবে এমন ম্যাচে ২-০ গোলে জয় পায় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করতে পোল্যান্ডের বিপক্ষেও জয় দরকার ছিল। সেই ম্যাচেও ২-০ গোলে জয়।
শুরুর ধাক্কা হজমের পর মেক্সিকো ও পোল্যান্ডের বিপক্ষে জয় এবং দলের একতাতে মুগ্ধ রদ্রিগো ডি পল, ‘আপনি সবসময় পরাজয় থেকে শেখেন এবং আমরা নিজেদেরকে এমন একটি অবস্থানে পেয়েছিলাম যা অস্বাভাবিক ছিল। তবে আমরা যথেষ্ট সামর্থ্যবান যে নিজেদের চরিত্র ও ব্যক্তিত্ব পরবর্তীতে ফুটিয়ে তুলেছি।’
দুই দল এখন পর্যন্ত সাত ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে প্রত্যাশিতভাবেই আর্জেন্টিনার জয় বেশি। পাঁচ ম্যাচ জিতেছে তারা। একটি ম্যাচ অস্ট্রেলিয়া ড্র করেছে। অপর ম্যাচ তারা জিতেছে। তবে বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দুই দল নক আউট পর্বে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।
যদি পরিসংখ্যান এবং শক্তির বিচার করতে হয় তাহলে অবশ্যই আর্জেন্টিনা বেশি শক্তিশালী। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে পোল্যান্ডের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা যেভাবে একচেটিয়ে খেলেছে সেই আত্মবিশ্বাসে ও খেলার ধার ধরে রাখতে পারলে অস্ট্রেলিয়ার ছন্নছাড়া হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আলবিসেলেস্তেদের পারফরম্যান্সে শেষ ম্যাচে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ছিল, মেসির ছায়া থেকে বের হয়ে এক দল হয়ে পারফর্ম করা।
প্রথমার্ধে মেসির পেনাল্টি মিসের পরও গোটা দল এক হয়ে পারফর্ম করে ম্যাচ জিতিয়েছে। দুই তরুণ তুর্কী ম্যাক অ্যালিস্টার ও জুলিয়ান আলভারেস গোল করে জিতিয়েছেন ম্যাচ। বাকিরাও রেখেছেন অবদান। কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে এমন পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি চাইবেন কোচ লিওনেল স্কালোনি।
ম্যাচের আগে শুক্রবার স্কালোনি বলেছেন,‘কোন কাজটা গুরুত্বপূর্ণ তা ছেলেরা এরই মধ্যে বুঝে গেছে। আমরা ম্যাচ বাই ম্যাচ এগোতে চাইছি। শেষ দুই ম্যাচে আমরা দলগতভাবে খেলে ভালো ফল পেয়েছি। সামনেও আমাদের একই পরিকল্পনা থাকবে। পোল্যান্ডের বিপক্ষে যে মেজাজে ছিলাম, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও সেরকমই আছি। আমাদের মাঠে নামতে হবে এবং ভালো ফুটবল খেলতে হবে।’
আলোচনায় আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে অস্ট্রেলিয়া ফেলনার পাত্র নয় মোটেও। অস্ট্রেলিয়া শেষবার দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলেছে ২০০৬ সালে। ২০১০, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে টানা তিন আসরে প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল। এবার ‘ডি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে ৪-১ ব্যবধানে উড়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। তবে তিউনিসিয়াকে ১-০ এবং ডেনমার্ককে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবে শেষ ষোলোয় জায়গা করে নেয় তারা।
অস্ট্রেলিয়া যে মেসিদের এক চুল পরিমাণ ছাড় দেবে না তা বোঝা গেল দলের ডিফেন্ডার মিলোস ডেগেনেক কথায়, ‘এটা ৯০ মিনিটের খেলা, হয়তোবা ১২০ মিনিটের। এটা নকআউট ম্যাচ। কেউ আমাদের এখানে প্রত্যাশা করেনি। আমরা সবকিছু নিংড়ে দেবো তাদের বিপক্ষে। আমাদের কোনো চাপ নেই। এটা কঠিন ম্যাচ হতে যাচ্ছে, খেলতে হবে সম্ভবত সেরা ফুটবলারের বিরুদ্ধে। কিন্তু এটা ১১ জনের বিরুদ্ধে ১১ জনের খেলা। ওদের দলে ১১ জন মেসি নেই, একজনই আছে।’
কাতার বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ, উত্তেজনা, উন্মাদনা ছড়িয়েছে বহু আগেই। আজ শুরু হবে ষোলো দলের চূড়ান্ত শিরোপার লড়াই। এরপর ধাপে ধাপে আট, চার, দুয়ের লড়া। ১৮ ডিসেম্বর হবে শিরোপার ফয়সালা।