দেশের অগ্রগতি-অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার হাতে গড়া আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণের জন্য কাজ করে যায়। জনগণকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী চান।
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল থেকে উন্নত দেশ গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। ই-গভর্ন্যান্স, ই-এডুকেশন অর্থাৎ ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে প্রত্যেক ক্ষেত্রে আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এভাবেই আমরা পরিকল্পনা করেছি এবং বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
সমালোচকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, যারা বলে কিছুই করে নাই তাদের জিগ্যেস করি- ১০০ সেতু একদিনে উদ্বোধন, ১০০ সড়ক একদিনে উদ্বোধন; এগুলো অতীতে কেউ করতে পেরেছে, পারেনি। পারে আওয়ামী লীগই। এটাই প্রামণিত সত্য।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেশের ৫০টি জেলায় ২০৪৯ দশমিক ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১০০ মহাসড়ক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল টাঙ্গাইল ও খুলনা জেলা। বাকি জেলাগুলো প্রজেক্টরের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই অর্থপাচারকারী, অগ্নিসন্ত্রাসকারী, গ্রেনেড হামলা করে মানুষ হত্যাকারী, মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা থেকে ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে অন্যের কাছে হাত পাতা; এই ধরনের মানসিকতার কেউ যেন এদেশে…। যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না তারা এদেশের কোনো উন্নতি চায় না। সে কথা সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে।
তৃণমূল থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে সড়ক ব্যবহারের নিয়ম-কানুনে শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, সাধারণ পথচারী, যাত্রী এবং ড্রাইভার ও হেলপার যদি সড়ক ব্যবহারের নিয়ম জানে এবং যথাযথভাবে মানে তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা কমে যাবে।
দেশের জনগণের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের দেশে একটা দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভার গাড়ি থামান না। ভয় পান। কারণ, সঙ্গে সঙ্গে জনগণ গিয়ে দুর্ঘটনা কবলিতকে সাহায্য না করে ড্রাইভারকে মারধর শুরু করেন। অনেক সময় গণপিটুনিতে ড্রাইভার মারা যান। এ কাজটা কেউ দয়া করে করবেন না। কেউ ইচ্ছে করে মানুষ মারে না। দুর্ঘটনা ড্রাইভারের কারণে হতে পারে, পথচারীর কারণেও হতে পারে। তবে আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নেবেন না। যদি অপরাধ করে, আপনারা ধরেন, পুলিশে/থানায় দিয়ে দেন। বিচার হবে। এজন্য আইনও করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, অনেক সময় গাড়ি থামালে আক্রান্ত ব্যক্তি বেঁচেও যেতে পারে। কিন্তু ড্রাইভারের না থামানোর কারণে মরে যায়। এজন্য ড্রাইভারদের ভীতি কমানোর দায়িত্ব জনগণের। দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে মেরে সমাধান হয় না। বরং আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দিন। চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। এ বিষয়ে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সবাইকে সচেতন হতে হবে। পৃথিবীর কোথাও নেই, দুর্ঘটনা ঘটলে ড্রাইভারকে পেটায়।
সড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপকভাবে চালক ও সহযোগীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদিও আমরা প্রায় পুরো দেশেই প্রশিক্ষণকেন্দ্র করে দিয়েছি। একই সঙ্গে সড়কপথে চলতে নিয়ম মানার শিক্ষা স্কুল জীবন থেকেই দিতে হবে। রাস্তা ব্যবহারের নিয়মকানুনেরও ট্রেনিং দেওয়া দরকার। সাধারণ মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। দরকার হলে রাস্তাঘাটে, হাটে বাজারে প্রদর্শন করতে হবে। তাছাড়া টেলিভিশনসহ নানা মাধ্যমে সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের গাড়ি চালকদের জন্য মহাসড়কে বিশ্রামাগার তৈরির নির্দেশ দিয়েছি। কিছু কিছু করা হচ্ছে। নির্ধারিত সময় ড্রাইভ করার পর রেস্ট নিতে হবে বা ভিন্নজনকে দিয়ে ড্রাইভ করাতে হবে। ড্রাইভারদের খাবার, বিশ্রামসহ সব বিষয়ে মালিকদের যত্নবান হতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারাদেশে সড়ক নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছি। অনেক সেতু করেছি। ড্রেজিং করে নদীপথও করেছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা এদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে। প্রত্যেকে প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হবে, প্রযুক্তি জানবে ও সুফল ভোগ করবে। এ লক্ষ্যে আমরা কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছি। জলবায়ুর অভিঘাত থেকে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলকে রক্ষা করে উন্নত জীবন দিতে চাই। এজন্য ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ তৈরি করেছি। যদি দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক, প্রগতিশীল সরকার ক্ষমতায় থাকে তাহলে এটা বাস্তবায়ন হতে থাকবে। যে সরকার জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করবে, নিজের ভাগ্য না।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে ও মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার সঞ্চালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব আমিনুল্লাহ নূরী। টাঙ্গাইল ও খুলনা থেকে যুক্ত হয়ে জেলা প্রশাসক ও উপকারভোগীরাও কথা বলেন।