‘জঙ্গিবাদে জড়িয়ে’ নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তৎপর গোয়েন্দারা

সম্প্রতি কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাত শিক্ষার্থীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া তরুণদের খোঁজে তৎপর হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। নিখোঁজ হওয়ার আগে এই তরুণদের অনেকেই অনলাইনে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল বলে তথ্য পেয়েছে তারা। কথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হওয়া নিখোঁজ তরুণদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের দ্রুত উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। যারা হঠাৎ এভাবে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ রয়েছে তাদের তালিকা করা হচ্ছে। দেশব্যাপী এ বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে একাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সে অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

বিশেষজ্ঞরা বলছে, অনলাইনে জঙ্গিবাদে নিজেকে সম্পৃক্ত করার পর বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের ঘটনা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। জঙ্গি সংগঠনগুলো সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে, যা এসব নিখোঁজের ঘটনার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হচ্ছে।

মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর রামপুরার হাজীপাড়া এলাকা থেকে শাকির আল ওয়ালী নামে এক চিকিৎসককে গ্রেফতার করে কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর সিটিটিসি জানায়, শাকির আল ওয়ালি আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। অনলাইনে সদস্য সংগ্রহ ও জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিলনের তিনি। এছাড়া কুমিল্লার সাত তরুণ নিখোঁজ হওয়ার পেছনে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে। সাত তরুণের সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য প্রমাণ পেয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।

গত ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাটারায় অভিযান চালিয়ে একজনকে গ্রেফতারের পর অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) জানায়, এই ব্যক্তি আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য। আরও জানানো হয়, তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে দেখা গেছে এই ব্যক্তি জঙ্গিবাদের মতাদর্শ সাইবার স্পেসে প্রচার করতো। প্রচারণার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের জন্য সদস্য সংগ্রহ করতো। কথিত জিহাদ ও রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনার সঙ্গেও তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন এনক্রিপ্টেড অ্যাপ ব্যবহার করে সে জঙ্গি সম্পর্কিত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল বলেও কর্মকর্তারা জানান।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, কুমিল্লা থেকে হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া সাত তরুণের সঙ্গে সম্প্রতি গ্রেফতারকৃত ডা. শাকির বিন ওয়ালীর যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। তার প্ররোচণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সাত যুবক আনসার আল ইসলামের দলে যোগ দেয়। ডাক্তার শাকিরের ইন্দনেই কুমিল্লার সাত তরুণ তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। তারা বের হয়ে কোথায় যাবে সে বিষয়েও নির্দেশনা দেয় শাকির।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) আইন ও গনমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজের ঘটনাগুলো বাড়তে থাকায় আমরা এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখছি। কুমিল্লা থেকে সাত তরুণ নিখোঁজের পর আরও চার জন তথাকথিত হিজরতের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। তাদের আমরা উদ্ধার করেছি। পরবর্তীতে তাদের ডিরেডিক্যালাইজেশন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে। এছাড়া, সাত তরুণের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে। তবে উদ্ধারকৃত চার জনের কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো নিয়ে গোয়েন্দারা কাজ করছে। তাদের অবস্থান শনাক্ত করে তাদের অচিরেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসলাম খান বলেন, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুত হয়েছি। নিখোঁজ তরুণদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের খুঁজে বের করা হবে। জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আঠার মতো লেগে আছে। এতে জনগণের ভয়ের কিছু নেই। অচিরেই এর রহস্য উন্মোচন হবে।

নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, এ ধরনের ঘটনা জানান দেয় জঙ্গি সংগঠনগুলো আবারও সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে। এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। হিজরতের জন্য নিয়ে যাওয়া বা বাইরে বের হয়ে যাওয়া জঙ্গি সদস্যদের রেডিক্যালাইজেশনের একটি অংশ। কোনও গোপন জায়গায় নিয়ে তাদের আরও আদর্শগত দীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। সেই সঙ্গে সামরিক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে কুমিল্লার সাত তরুণ কাদের প্ররোচনায় বের হয়ে গেছে, কারা নিয়ে গেছে এ বিষয়টি এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বিষয়টি দ্রুত উদঘাটন করা উচিত।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন