সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকারের ধান ও চাল ক্রয়ে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে।
অনেক গ্রামের তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে প্রকৃত কৃষককে। আবার একই পরিবারের ৫জন থেকে ৭ জনকে কৃষক হিসাবে দেখানো হয়েছে। চেয়ারম্যান-মেম্বারদের আত্মীয় স্বজনও রয়েছেন তালিকায়।
এছাড়াও কৃষি পেশায় নেই এমন ব্যক্তিদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তালিকায় রয়েছে প্রবাসীদের নামও।
এনিয়ে কৃষকের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। আর উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দায়ভার এড়িয়ে একে অপরের প্রতি দোষ চাপাচ্ছেন।
গত ৭ মে থেকে উপজেলায় ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু করা হলেও চাহিদার ১৬৭৮ টনের মধ্যে নেয়া হয়েছে এখন পর্যন্ত নেয়া হয়েছে মাত্র ১৩০ মেঃ টন।
টন প্রতি খাদ্য গোদামের কর্মকর্তাকে চাহিদা মতো টাকা না দেয়ায় নানা অজুহাত দেখিয়ে কৃষকদের ধান ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।
প্রতিবছর ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হলেই এই প্রক্রিয়া চলে যায় প্রভাবশালীদের নিয়ন্ত্রণে। তারা অন্য কৃষকের কাছ থেকে কমদামে ধান কিনে নির্ধারিত মূল্যে সরকারি গুদামে বিক্রি করে লাভবান হন।
ধানের দরপতন ঠেকাতে ৭ মে থেকে সরকার নির্ধারিত প্রতি মণ ধান ১২৮০ টাকা দরে ধান-চাল কেনার কার্যক্রম শুরু হয় যা চলবে ৩১ জুন পর্যন্ত। ধান সংগ্রহ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে কৃষকদের কাছে থেকে ধান সংগ্রহের কাজ শুরু হয়।
আনফর উল্লাহ নামে এক কৃষক জানান, স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি ধান নিয়ে আসলেও তার ধান নানা অজুহাতে গ্রহন করা হচ্ছে না।
তালিকাভুক্ত কৃষক রমিজ আলী জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে আমার ধান খাদ্য গোদামে পড়ে রয়েছে, এখনো মাপঝোক করা হয়নি।
আনছার মিয়া নামে আরেক কৃষক জানান, কৃষি কর্মকর্তা ও স্থানীয় মেম্বারকে টাকা না দেওয়ায় তালিকায় তার নাম উঠেনি বরং কৃষক নন এমন মানুষদের তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে খাদ্য গুদামের পরিদর্শক দিপক সুত্রধর বলেন, ‘আমাদের এখানে কোন দুর্নীতি হচ্ছে না, আমরা কৃষকের তালিকা মোতাবেক ধান নিচ্ছি। তালিকায় কোন অনিয়ম হলে কৃষি অফিস করেছে। তাদের তালিকায় যদি কোন কৃষক বাদ পড়ে আমাদের কিছু করার নেই, আবার কোন অকৃষক যদি তালিকায় ঢুকে আমাদের কিছু করার নেই।‘
কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নেই নাই। যারা এসব অভিযোগ করেছে সেটা সঠিক নয়।‘
জগন্নাথপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা ভাল বলতে পারবেন। কারন তাদের মাধ্যমেই এ তালিকা করা হয়েছে। আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কৃষক আসলে সেই ধান সংগ্রহ করি আবার অনেকে ধান রেখে চলে যান।‘
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাউছার আহমেদ বলেন, ‘আমরা স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহযোগিতায় কৃষকদের তালিকা তৈরি করেছি। তালিকায় কোনো অনিময় দুর্নীতি হয়ে থাকলে আমরা খতিয়ে দেখবো।‘
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির আহ্বায়ক আল বশিরুল ইসলাম বলেন, ‘কোন অনিয়ম হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে, কৃষকের তালিকায় যদি চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিজের নাম এবং আত্মীয়স্বজনের নাম দেয়া হয় অবশ্যই আমরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।‘
জগন্নাথপুর ধান-চাল সংগ্রহ কমিটির উপদেষ্টা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, যদি তালিকায় কোনো প্রবাসীদের নাম দেয়া হয় এবং জনপ্রতিনিধিদের নাম পাওয়া যায় তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।‘