সেবাগ্রহীতাদের নেতিবাচক ধারণা পাল্টে জগন্নাথপুর ভূমি অফিসকে আমূল পরিবর্তন করে ফেললেন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ।
যোগদানের মাত্র ১৫ মাসের মধ্যে সাড়ে কয়েক হাজার নামজারি ও মিসকেস নিষ্পত্তি করে তাকে লাগিয়ে দিয়েছেন ৩৭তম বিসিএস ব্যাচের এই কর্মকর্তা।
যেখানে নিজের জমির নামজারি করতে সময় লাগতো ছয় মাস থেকে এক বছর। সেই নামজারি সম্পন্ন করতে এখন সময় লাগে মাত্র ২৮ দিন।
সম্প্রতি সরেজমিন জগন্নাথপুর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, পুরো কার্যালয় পরিপাটি করে সাজানো। ভবনের বাইরে টবে নানা প্রজাতির ফুল, ফল ও সৌন্দর্যবর্ধক গাছ। গেটে প্রবেশ করে একটু সামনে এগুলেই চোখে পড়বে পুরো অফিসের ফ্লো-চার্ট। এর পাশেই সাঁটানো সিটিজেন চার্টার। এতে জমির নামজারি করতে খরচ, খতিয়ান তোলার খরচ, খাসজমি বন্দোবস্ত নিতে করণীয়, কোন বিষয়ে কার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে এসব তথ্য লেখা রয়েছে।
এছাড়া অফিসের মূল ভবনের বাইরে রয়েছে নারী সেবা গ্রহীতাদের জন্য রিফ্রেশ কক্ষ। মহিলাদের জন্য রয়েছে ব্রেস্টফিডিং কর্নার রয়েছে। একটু সামনেই রয়েছে জগন্নাথপুর ৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা সদর ভূমি কার্যালয়ের বিশালাকার ম্যাপ। সহকারী কমিশনারের কক্ষের পাশেই রয়েছে নমুনা ফরমের বাক্স।
সেখানে সাজানো নানা আবেদন ফরম। সেখান থেকে সেবা-প্রার্থীরা বিনা খরচে ফরম নিতে পারেন। এছাড়াও সেবাগ্রহীতাদের জন্য রাখা হয়েছে অভিযোগ বাক্স। সেবা নিতে এসে কেউ হয়রানি হলে তারা সেখানে অভিযোগ করতে পারবেন অথবা সরাসরি দেখা করতে পারবেন।
সরেজমিন পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, উপজেলা ভূমি অফিসের প্রতিটি কক্ষ নাম্বারিং করা এবং নেমপ্লেট লাগানো। তাছাড়া পুরো অফিসটি সিসি ক্যামেরা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
এই অফিস ক্যাম্পাসের ভেতরেই রয়েছে ভূমি সেবা কেন্দ্র। এখানে সেবা গ্রহীতাদের বসার জন্য রয়েছে একটা গোলঘর। গোলঘরে রয়েছে একটি ‘সিটিজেন বেল’। কোনো সেবা গ্রহীতা যদি ভূমি অফিসের কোনো কর্মচারীর দ্বারা হয়রানির শিকার হন, তাহলে সেবাগ্রহীতা এখানে বেল চাপলেই স্বয়ং সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাজির হবেন।
গত বছরের (২০২২)১৩ অক্টোবর জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারের দায়িত্ব নেন। রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ। দেশের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী গ্রামে।
জগন্নাথপুর যোগ দেওয়ার পর দালালদের দৌরাত্ম দেখে চালু করলেন ‘সিটিজেন কলিংবেল’ সেবা। এরপর থেকে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে দালালদের আনাগোণা। জগন্নাথপুর ভূমি অফিসের সেবার মানও হয় আগের চেয়ে বহুগুণে উন্নত। এখন আর এখানে কাউকে হয়রানি বা ভোগান্তির শিকার হতে হয় না। এজন্য উপজেলাবাসীও অনেকটাই খুশি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি)রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা সা-আধ জানান, শুরুতেই পুরো অফিস ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় এনে কঠোর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দালাল মুক্ত করা হয়েছে। অফিসের নবনির্মিত ভবনের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্যেও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘যার কাজ তাকেই সরাসরি আমার অফিসে আসতে উৎসাহ দিচ্ছি। অন্য কারো হাত দিয়ে আসা মানেই সেখানে দালাল ঢুকে পড়া। ফলে এখন সেবা গ্রহীতারা সরাসরি আমার অফিসে আসতে পারছেন।’