সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় কুশিয়ারা নদীর পাড়, সরকারি খাস জমি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ফসলি জমির মাটি কাটা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। উল্টো দিন দিন আরও সক্রিয় হয়ে উঠছে ভূমিখেকোরা। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত ভূমিখেকোরা কাটছে জমির মাটি। এতে জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। ফসল চাষের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে এসব জমি।
শুক্রবার (১০ মার্চ) উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের তুরুকভাগ এলাকার পাইলগাঁও অলই তলি মৌজা ও খানপুর মৌজায় গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমির মাটি কাটার পাশাপাশি কুশিয়ারা নদীর পাড় কাটা চলছে। এমনকি রানীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর মধ্যখান থেকে প্রতিরাতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। বালুবাহী গাড়ির শব্দে আশপাশের মানুষজন রাতে ঘুমাতে পারেন না বলে জানান। দিনের বেলা সাংবাদিকদের দেখে বন্ধ থাকতে দেখা যায় কয়েকটি এক্সকেভেটর। তবে জানা গেছে, রাত হলেই শুরু হবে ফসলি জমির মাটি কাটা ও নদী থেকে বালু উত্তোলনের মচ্ছব।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখানে মাটি কাটায় সক্রিয় তারেক আল আমীন ও রহিম উল্লা নামের দুই ব্যক্তি। এর মধ্যে তারেক পাইলগাঁও ইউনিয়নের বাসিন্দা।
এছাড়া জানান গেছে, অলৈতলি মৌজার কুশিয়ারা নদীর চরের বালু অবৈধভাবে তোলে নবীগঞ্জের চরগাঁও গ্রামের বালুখেকো সুবেদ গংদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হচ্ছে। এসব অবৈধ মাটি কাটা ও বালু উত্তোলন সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের চোখের সামনেই হচ্ছে। তবে অদৃশ্য কারণে এসব চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
স্থানীয় সূত্রে জানান যায়, বেশ কিছুদিন ধরে তারা সরকারি খাস জমির ও নদীর পাড়ের মাটি কেটে বিক্রি করছেন। দিনের বেলা এক্সকেভেটর বন্ধ রাখেন আর রাতের বেলা শুরু করেন মাটি কাটা। মাটি কেটে তারা বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন। স্থানীয়রা এর প্রতিবাদ করলে তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে থাকেন বলেও জানা যায়।
শুধু এই চক্রটিই নয়, আরও অনেকেই মাটি কাটার সাথে জড়িত রয়েছে। এরা সমাজে ভূমিখেকো নামে পরিচিতি পেয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, অতি শিগগির এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
রানীগঞ্জ ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, আল আমিন ও রহিম উল্লা নামের দুইজন নদীর পাড় কেটে নিচ্ছে এমন ছবি ও ভিডিও আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়েছি। এখন পর্যন্ত আর কোনো খবর পাইনি।
রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁওয়ের ভূমি কর্মকর্তা আব্দুল হাফিজ বলেন, যারা সরকারি খাস জমির মাটি কাটছে তাদেরকে চিহ্নিত করে একটি রিপোর্ট আমরা তৈরি করছি। রিপোর্টটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রেরণ করও, যাতে এদের বিরুদ্ধে শক্তভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আমরা সবসময় চেষ্টা করছি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।
জানা গেছে, গত দুই মাস পূর্বে চরগাঁও গ্রামের সুবেদ গংদের গাড়ি আটক করা হলেও পরবর্তীতে জগন্নাথপুর উপজেলা প্রশাসন গাড়িগুলো ছেড়ে দেয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে জগন্নাথপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সাজেদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।