সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার শ্রীরামসি গণহত্যা দিবস আজ বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট)।
১৯৭১ সালের আজকের এইদিনে স্বাধীনতাকামী শান্তিপ্রিয় শ্রীরামসি গ্রামের লোকজনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের সহযোগিতায় হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এতে বিপুল লোকজনের প্রাণহানি ঘটে।
১৯৮৬ সাল থেকে শহীদের স্মরণে ‘শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে।
এবছরও দিবসটি উপলক্ষে ‘শ্রীরামসি শহীদ স্মৃতি সংসদ’ এর উদ্যোগে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, শোক সভা ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ১০ টায় শ্রীরামসি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় আজকের এই দিনে সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের শ্রীরামসি গ্রামে শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসীকে গণহত্যার শিকার হতে হয় পাক-হানাদার বাহিনী ও রাজাকার বাহিনীর হাতে।
এদিন সকাল ১০টায় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কয়েকটি নৌকাযোগে স্থানীয় শ্রীরামসি বাজারে আসে এবং বেশ কয়েকজন রাজাকার দ্বারা শ্রীরামসি গ্রামবাসীকে শান্তি কমিটির সভা বলে খবর দিয়ে তৎকালীন শ্রীরামসি হাইস্কুল (শ্রীরামসি স্কুল এন্ড কলেজ)-আনা হয়; তখন তাঁরা শান্তির আশায় জড়ো হন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। অনেককে রাজাকার দ্বারা বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়েছে।
এক পর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনী ও রাজাকারদের সমন্বয়ে ১০/১২ জন করে হাত-পা বেঁধে লাইন ধরিয়ে নিরপরাধে ১২৬ জন নিরিহ মানুষকে হত্যা করে। নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডের পরপরই পাকসেনারা শ্রীরামসি গ্রামের প্রায় ২৫০টি ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দেয়। ভীত-সন্ত্রস্ত মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গেলে দাফনের অভাবে পড়ে থাকা লাশগুলোকে শেয়াল- কুকুর টানা হেঁচড়া করে।
নিহতদের মধ্যে ছিলেন ছাত্র, শিক্ষক, সরকারি কর্মচারী, যুবক, সাধারণ গ্রামবাসী। এমনকি তাঁরা কয়েক শতাধিক বাড়ী-ঘর জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। আর সেই দিনের হত্যাযজ্ঞ স্মরণ রাখার জন্য ১৯৮৬ সালের ৩১ আগস্ট সর্বপ্রথম শ্রীরামসি আঞ্চলিক শহীদ দিবস পালন করা হয়।
সিলেট ভয়েস/এএইচএম