একটিমাত্র বাঁশের সেতু পাল্টে দিলো দুটি গ্রামের জীবনযাত্রা। বর্ষা মওসুমে স্কুলে না যেতে পারা শাতাধিক শিক্ষার্থীও ফের স্কুল মুখী হতে পারলো।
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ড এলাকায় জগন্নাথপুর ও হাসিমাবাদ গ্রামের মাঝে নলজুর নদী। দীর্ঘদিনেও নদীতে কোন সেতু নির্মাণ না হওয়ায় নানা ভোগান্তির শিকার হয়ে আসছিলেন দুই গ্রামের মানুষ। সেতুর অভাবে বর্ষা মৌসুমে নদী পারাপার নিয়ে বেশি বেকায়কায় পড়েন কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
নদীর পূর্বপ্রান্তে জগন্নাথপুর গ্রামে স্কুল হওয়ায় পশ্চিমপ্রান্তে থাকা হাসিমাবাদ গ্রামের প্রায় শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী স্কুলে যেতে পারে না। নৌকাযোগে যাতায়াত করতে গিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনায় কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ নৌকা ডুবে যায়। হতাহত নাহলে ঝুঁকি নিয়ে পারাপারে এসেছে অনীহা, একারণে হাসিমাবাদ গ্রামের প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থীর স্কুলে যাওয়া প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।
এ ঘটনার পর স্থানীয় উত্তর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিনা খানম বিষয়টি স্থানীয় ৬নং ওয়ার্ডের পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দকে জানান এবং ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফের স্কুলে ফেরাতে নলজুর নদীতে একটি সেতু নির্মাণের জোর দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ নদীতে দ্রুত একটি সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এর কাছে দাবি উথ্থাপন করেন।
নদীতে পাকা সেতু নির্মাণ সময় সাপেক্ষ হওয়ায় এখনই যোগাযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আপাতত বাঁশের সেতু নির্মাণের নির্দেশনা দেন মন্ত্রী। এমন নির্দেশনার আলোকে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বাঁশের সেতু নির্মাণ করা হয়।
স্থায়ী সেতু নাপেলেও বাঁশের সেতু পেয়েই হাসি ফুটেছে গ্রামবাসীর মুখে। যুগযুগ ধরে চলে আসা ভোগান্তির অবসান হয়েছে। আবারও স্কুলমুখী হয়েছে হাসিমবাদ গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী।
সেতু নির্মিত হওয়ায় উভয় গ্রামের মধ্যে বেড়েছে যোগাযোগ। মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সেই কাঙ্খিত বাঁশের সেতুটি উদ্বোধনকালে নদীপারে নারী, পুরুষ, শিক্ষার্থী সহ বিভিন্ন পেশার হাজারো জনতার ঢল নামে নদীপাড়ে। তখন সবার মুখে ছিল আনন্দের হাসি।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সোহরাব হোসেন, সাবেক ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র শফিকুল হক, স্থানীয় পৌর কাউন্সিলর কৃষ্ণ চন্দ্র চন্দ, উত্তর জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লিনা খানম প্রমূখের উপস্থিতিতে নতুন বাঁশের সেতুর উদ্বোধন করেন জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু।
প্রধান শিক্ষক লিনা খানম বলেন, এ নদীতে সেতু না থাকায় আমার স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে যেতো পারতো না। নতুন বাঁশের সেতু হওয়ায় এখন স্কুলে যেতে পারছে। সেই সাথে দুই গ্রামের মানুষের সেতুবন্ধন হয়েছে। এতে আমরা আনন্দিত হয়েছি। আপাতত বাঁশের সেতু হয়েছে। আগামীতে এখানে স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণের জন্য পরিকল্পনামন্ত্রী সহ সকলের কাছে জোর দাবি জানাই।
জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন বলেন, নলজুর নদীর উপরে আইডি না থাকায় সেতু হয়নি। এখন আইডিতে অন্তর্ভূক্ত করে সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, জনভোগান্তি লাঘবে ও কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া যাতে ব্যাহত না হয়, তাই এখানে দ্রত স্থায়ী পাকা সেতু নির্মাণ করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানও শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর চলাচলের জন্য নলজুর নদীর উপর সেতু নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন।