সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে প্রার্থীদের সব ধরণের প্রচার-প্রচারণা শেষ। রাত পোহালেই শুরু হবে ভোটগ্রহণ।
বৃহস্পতিবার ইভিএম পদ্ধতিতে ভোটগ্রহণ হবে। তবে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়ার সম্ভাবনা কম।
নির্বাচনে প্রার্থীরা হলেন, আওয়ামী লীগ মনোনীত নুরুল ইসলাম; জাতীয় পার্টির আতাউর রহমান; জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের যুক্তরাজ্যপ্রবাসি আব্দুল কাইয়ুম কামালী সিতু; যুক্তরাজ্যপ্রবাসী স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন রাশীদ এবং যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসি সৈয়দ তালহা আলম।
নির্বাচনী মাঠ ঘুরে ও ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রবাসি অধ্যুষিত জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদে চলতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনই প্রবাসি। চেয়ারম্যান পদে উপনির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে প্রভাবক হিসেবে বেশ কিছু বিষয় কাজ করছে। নিজস্ব ভোট ব্যাংক ছাড়াও এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে দলীয় প্রভাব। সেই সঙ্গে প্রবাসি এবং স্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী ও সামাজিক সংগঠনের সমর্থনও ভূমিকা রাখবে।
সর্বশেষ গত ২ নভেম্বর জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে দুজন প্রবাসি ছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকমল হোসেন বিজয়ী হন। পরে ২৬ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকমল হোসেন মারা যাওয়ায় উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসি সৈয়দ তালহা আলম জমিয়তের প্রার্থী ছিলেন। তখন তিনি কোটি টাকা ব্যয় করেছেন বলে দাবি করেছেন তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সমর্থক। এবার নির্বাচনেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তিনি টাকার খেলায় মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জগন্নাথপুর উপজেলা নাগরিক ফোরামের আহ্বায়ক নুরুল হক বলেন, প্রবাসিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ মানেই কালো টাকা ছড়ানোর মহোৎসব। এবার উপনির্বাচনে তিন প্রবাসি প্রার্থী কালো টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করছেন। উপনির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ভার দলের নেতা-কর্মীরা বহন করছেন আর জাতীয় পার্টির প্রার্থী তো টাকার অভাবে পোস্টারই ছাপাতে পারেননি। অপর তিন প্রবাসি প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র তালহা আলম ও হারুন রাশীদ। আর জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম কামালী নির্বাচন কমিশনের ব্যয়সীমা অতিক্রম করে ভোটারদের মধ্যে টাকা বিতরণ করছেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসি স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ তালহা আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি আচরণবিধি মেনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। টাকা বিতরণের অভিযোগ ঠিক না।’
জমিয়ত উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী আব্দুল কাইয়ুম কামালী সিতু এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন রাশীদ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগও অস্বীকার করেছেন।
জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান বলেন, প্রবাসি প্রার্থীরা কালো টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনী পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত করছেন। আগে নির্বাচন এলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত কাজ করত। প্রবাসি প্রার্থীদের কারণে এখন প্রচারণায় গেলেই পকেটের দিকে তাকায়। তিন প্রবাসি প্রার্থীর বিরুদ্ধে টাকা বিতরণের অভিযোগ প্রশাসনের খতিয়ে দেখার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি শতভাগ নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে নির্বাচন করছি। জগন্নাথপুরের মানুষ জানে কারা নির্বাচনে কালো টাকা ছড়িয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে।’
জগন্নাথপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ সুশৃঙ্খল পরিবেশে নির্বাচন সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মুজিবুর রহমান বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটের সরঞ্জাম পাঠানো হবে। এ উপজেলায় একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৮৯টি। ইভিএম পদ্ধতিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ হবে।