জগন্নাথপুরে ‘গণহত্যা’ দিবস পালন

পহেলা সেপ্টেম্বর উপলক্ষে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার রানীগঞ্জে গণহত্যা দিবস পালন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ১৯৭১’র ওইদিনে উপজেলার রানীগঞ্জে সাধারণ মানুষদের ওপর নৃংশস হত্যাযজ্ঞ চালায় পাক হানাদার বাহিনী। এরপর থেকেই নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রতিবছর ওইদিনটি পালন করে আসছেন স্থানীয়রা।

জানা যায়, ১৯৭১ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর পাক হানাদার বাহিনী স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় প্রাচীনতম নৌরবন্দর হিসেবে খ্যাত কুশিয়ারা নদীর তীরে অবস্থিত রানীগঞ্জ বাজারে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ওইদিন কুশিয়ারা নদীর স্রোতে ভাসতে থাকে একের পর মরদেহ। রক্ত গঙ্গায় পরিণত হয় কুশিয়ারা নদীর পানি। নিরীহ মানুষজনকে হত্যার পর পেট্রোল দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় পুরো রানীগঞ্জ বাজার।

তবে এতেই শেষ নয়। আগেরদিন ৩১ আগস্ট উপজেলার শ্রীরামসি গ্রামে আরেকটি বর্বরোচিত গণহত্যা সংঘঠিত হয়েছিল। এ দুই নৃংশস হত্যাযজ্ঞের ঘটনা আজও ভুলতে পারেননি স্থানীয় জনগণ। প্রতিবছরই নানা কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করেন তারা।

ইতিহাস বলে, ১৯৭১ সালের ওই দিনে শান্তি কমিটি গঠনের কথা বলে স্থানীয় রাজাকার, আলবদর ও আলশামস বাহিনীর সহায়তায় ব্যবসায়ী, বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসা লোকজন ও নৌকার মাঝিসহ ক্রেতা-বিক্রেতাদের বাজারের একটি বড় দোকানে জমায়েত করে। সেদিন সেখানে প্রায় দুই শতাধিক মানুষকে জড়ো করে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই সকলকে রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়। পরে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় কুশিয়ারা নদীর তীরে। সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে পেছন দিক থেকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়।

ইতিহাসের জঘন্য এই নারকীয় তাণ্ডবে প্রায় দেড় শতাধিক লোক শহিদ হলেও হত্যাযজ্ঞের পর ৩৪ জনের নাম পরিচয় শনাক্ত করা হয়। বাকিদের পরিচয় এখন পর্যন্ত এলাকাবাসী জানতে পারেননি। বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের এ ক্ষত এখনও মুছে যায়নি রানীগঞ্জবাসীর অন্তর থেকে। এটি যেন ছিল রানীগঞ্জবাসীর জন্য চির এক অভিসাপ।

আজ রোববার দুপুরে প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় পাইলগাঁও রানীগঞ্জ ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল, অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম নজির, রানীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম আকন্দ, স্থানীয় ইউপি সদস্য কাউছার আহমদ তালুকদারসহ সাধারাণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠনের সদস্যরা শহীদদের স্বরণে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

এদিকে দিবসটি উপলক্ষে সামাজিক সংগঠন শহিদ গাজী ফাউন্ডেশন’ ও রানীগঞ্জ মডেল সোসাইটি যথাক্রমে ২০০৩ ও ২০১১ সাল থেকে রানীগঞ্জ গণহত্যায় শহীদদের স্বরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে আসছে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দোয়া মাহফিল ও শিন্নি বিতরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শহীদ গাজী ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবুল কাশেম আকমল এবং রানীগঞ্জ মডেল সোসাইটি সভাপতি মো. আল আমীন।