জগন্নাথপুরে কুশিয়ারার পাড়ে বাদাম চাষে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কুশিয়ারা নদীর চর সহ চাষের উপযোগী মাটিতে চাষাবাদ হচ্ছে অন্যতম লাভজনক ফসল চিনা বাদাম। রানীগঞ্জ, পাইলগাঁও ইউনিয়ন সহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্য বছর গুলোর তুলনায় এ বছর অধিক জমিতে বাদাম চাষ করতে দেখা গেছে। চাহিদা বেশি থাকায় কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় সবজির পাশাপাশি বাদাম চাষে কৃষকদের  দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে।

বিস্তীর্ণ কুশিয়ারা নদীর চর ও তীরবর্তী  এলাকায় বাদামের  সবুজ পাতা বাতাসে দোল খাচ্ছে। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় বাদাম চাষে ঝুঁকছেন এসব এলাকার কৃষকরা। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বাদামের মৌসুমে ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশাবাদী স্থানীয় কৃষি অফিস।

রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক মুজিবুর রহমান বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শে কুশিয়ারা নদীর চরে উপযোগী মাটিতে এবার ১০ বিঘা জমিতে  বাদাম চাষ করেছি, বোনা থেকে নিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৬৫ হাজার টাকা, ৬০ থেকে ৭০ মণ ফলন হবে।

একই ইউনিয়নের টেংরাখালী গ্রামের কৃষক মশাহীদ আলী বলেন, গতবছর ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে লাভবান হয়েছি, এবছর প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি, লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে। আশা করছি, ১৫০ থেকে ১৬০ মন বাদাম উৎপাদন হবে।

পাইলগাঁও ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামের কৃষক ফয়জুর রহমান শাহীন বলেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সরকারি প্রণোদনায় প্রথমবার দুই বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি, প্রায় ১৮ হাজার টাকা  খরচ হয়েছে।তাতে ১২ থেকে ১৪ মন উৎপাদন হবে।

রানীগঞ্জ ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী হরিণা কান্দি গ্রামের শতাধিক কৃষকেরা সরকারি প্রণোদনা ও নিজ উদ্যোগে চলতি বছর প্রায় ৩৮ হেক্টর অনাবাদি জমিতে বাদাম চাষ করেছন। এলাকার এসব কৃষকদের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী আমাদের শতশত একর  অনাবাদি জমি রয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সরকারি সহযোগিতায় এবছর আমরা অনাবাদি গুলো চাষের আওতায় নিয়ে এসেছি।

হরিণা কান্দি গ্রামের কৃষক দুলেন দাশ বলেন, আমরা গত বছর  কয়েক জন কৃষক মিলে ২০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে লাভবান হয়ে এবছর আমাদের গ্রামের শতাধিক নিজ উদ্যোগে প্রায় ৩৮ হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। সেক্ষেত্রে আমরা বাদামের সঠিক বাজারদর পাওয়ার প্রত্যাশা করি।

রৌয়াইল গ্রামের কৃষক আজির উদ্দিন বলেন, এবার আমি ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। সরকারিভাবে সাহায্য সহযোগিতা পেলে সামনে আরও বেশি করে আবাদ করবো।

জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল-বশিরুল ইসলাম বলেন, জগন্নাথপুর উপজেলায় অনাবাদি পতিত জমি রয়েছে, এসব জমি চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী এক ইঞ্চি জায়গা যেন খালি না থাকে, সে লক্ষ্যেই এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।

জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কাওসার আহমেদ বলেন, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অনাবাদি জমিতে চিনা বাদাম চাষ হয়েছে। চলতি মৌসুমে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় উপজেলার রানীগঞ্জ ও পাইলগাঁও ইউনিয়নের কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী এলাকায় কৃষকদের বাদাম চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। পরিত্যক্ত অনাবাদি জমিতে লাভজনক ফসল চিনা বাদাম, ভূট্টা, মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু সহ মৌসুমি সবজি চাষাবাদ হচ্ছে।