বিদেশে প্রচুর চাহিদার কারণে সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংগ্রহ করা কুচিয়ার কদর বেড়েছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সংগ্রহ করা কুচিয়া এখন চীন, হংকং, তাইওয়ান ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে। আর এ কুচিয়া ধরে জগন্নাথপুর স্থানীয় আড়তে বিক্রি করে পার্শ্ববর্তী নবীগঞ্জ উপজেলার চরগাওঁ ও রমজানপুরসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লীর প্রায় শতাধিক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে।।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বংশপরম্পরায় খাল, বিল, নদী ও ডোবাসহ বিভিন্ন জলাশয় থেকে কুচিয়া মাছ সংগ্রহ করে তারা। এই কুচিয়া বিক্রি করেই তাদের সংসার চলে। তবে আগে বাজারে কুচিয়ার তেমন চাহিদা ছিল না। দামও ছিল কম। কিন্তু বিদেশে রফতানি শুরু হওয়ার পর থেকে কুচিয়ার কদর বেড়েছে। বেড়েছে দামও। কুচিয়া মাছ কেনার জন্য গ্রামে গড়ে উঠেছে আড়ত। আড়ত থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রচুর পরিমাণে কুচিয়া মাছ বিদেশে রফতানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে।
কুচিয়া মাছ মূলত অঞ্চলভেদে কুচে, কুইচ্চা নামে পরিচিত। রাক্ষুসে স্বভাবের এ মাছের প্রধান খাদ্য বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ, জলজ পোকা ও প্রাণী। এরা মূলত অদ্ভুতভাবে মুখ দিয়ে বাচ্চা জন্ম দেয়। একটি মা মাছ একসঙ্গে সহস্রাধিক বাচ্চা জন্ম দিতে পারে। বছরের নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত কুচিয়া মাছ ধরার মৌসুম। তবে এপ্রিল মাসে বেশি পরিমাণে কুচিয়া মাছ পাওয়া যায়। বিশেষ করে কুচিয়া মাছ মানুষ বিভিন্ন রোগের প্রতিকারের জন্যও খেয়ে থাকেন। প্রতিদিন একজন জেলে গড়ে ৪ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত কুচিয়া মাছ ধরতে পারেন।
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পল্লীর নবীগঞ্জ উপজেলার চরগাওঁ গ্রামের মহাদেব নমশুদ্র বলেন, ‘পুকুর অথবা জলাশয়ের ধারে ছোট ছোট গর্ত চিহ্নিত করে গর্তগুলোর সামনে বাঁশ দিয়ে নির্মিত বিশেষ এক প্রকার চাঁই বসানো হয়। তাতেই সারাদিনে কুচিয়া মাছ জমা হয়। এসব কুচিয়া স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা আড়তে বিক্রি করি।’
সুশেন নমশূদ্র নামে আরেক জেলে জানান, প্রতিদিন সকালে দল বেধে কুচিয়া ধরতে বের হন তারা। সাধারণত প্রতি দলে সদস্য থাকেন ২ থেকে ৩ জন। প্রতিটি দল সারাদিনে গড়ে ৪ থেকে ৭ কেজি কুচিয়া সংগ্রহ করতে পারেন। দিন শেষে ১৩০ থেকে ২৫০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করেন আড়তে। এভাবে কুচিয়া মাছ বিক্রি করে শতাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পারিবারের সংসার চলছে।
জগন্নাথপুর বাজারের আড়তদার বানী বাবু তালুকদার বলেন, ‘আমরা সরাসরি কুচিয়া বিদেশে পাঠাতে পারি না। আমরা স্থানীয় ভাবে সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাই। সেখান থেকে ঢাকার আড়তদাররা চীন, হংকং, ভারত ও আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতারি করেন।