জকিগঞ্জ রোডে ধর্মঘট, প্রতিবাদে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ

সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে সরকারি বিআরটিসি বাস চলাচলের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে জকিগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ ঐক্য পরিষদ ও বাস মালিক সমিতির বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে। এ নিয়ে জকিগঞ্জের সর্বস্থরের মানুষ ফুঁসে উঠছে।

এর অংশ হিসেবে জকিগঞ্জ যাত্রী কল্যাণ ঐক্য পরিষদ বৃহস্পতিবার মানবন্ধনসহ বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দিয়েছে। এমনকি জকিগঞ্জের প্রতিটি বাজারে যাত্রী কল্যাণ ঐক্য পরিষদের স্থানীয় কমিটি জনসাধারণকে নিয়ে অবস্থান নিবে বলে ঘোষণা করেছে।

জকিগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হিসাবে গত ৫ জানুয়ারি জেলা শহর থেকে দেশের সবচেয়ে দূরবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জে মাত্র ৪টি বাস দিয়ে একটি সড়কে সরকার বিআরটিসি বাস চালু করে। স্বতস্ফুর্তভাবে জকিগঞ্জবাসী সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে বাকী দুইটি সড়কে পর্যাপ্ত বাস সার্ভিসের দাবী করে আসছে। বিআরটিসি বাস চালুর বিষয়টি বাস মালিক সমিতি কোনভাবে মেনে নিতে পারছে না।

গত মাসে একবার ধর্মঘটের ডাক দিলে পরে প্রত্যাহার করে নেয়। সর্বশেষ জকিগঞ্জের সর্বদলীয় সংগঠন যাত্রী কল্যাণ ঐক্য পরিষদ গত ২ মার্চ জেলা প্রশাসক বরাবরে জকিগঞ্জের সবকটি সড়কে বিআরটিসি বাস চালুসহ অপর দুইটি সড়কেও বিআরটিসি বাস সার্ভিস চালুর জন্য লিখিতভাবে আবেদন করেন। সিলেট-রতনগঞ্জ সড়ক ও সিলেট-শেওলা-জকিগঞ্জ সড়কে অবিলম্বে বিআরটিসি বাস চালু ও ভাড়া আরোও সহনীয় করার দাবী জানান তারা।

একচেটিয়া ব্যবসার গুমড় ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে মালিক সমিতি সেবার প্রতিযোগিতায় যেতে নারাজ। তাই তারা আগামী বৃহস্পতিবার বিআরটিসি বাস বন্ধের দাবীতে কর্মবিরতির নামে তিন দিক ভারত বেশিষ্ট জকিগঞ্জ উপজেলাবাসীকে জিম্মি করার কুটকৌশল হিসাবে ধর্মঘটের ঘোষণা করেছে বলে ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।

এর আগে গত ৫ মার্চ সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস চলার প্রতিবাদে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দেয় জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি।

বিআরটিসি বাস বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারের পূর্ববর্তী আশ্বাস আগামী ৮ মার্চের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে ৯ মার্চ থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘটের আগাম ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।

রোববার (০৫ মার্চ) জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে মালিক-শ্রমিকদের জরুরী সভা থেকে নেতৃবৃন্দ এমন সিদ্ধান্তের কথা জানান।

পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতারা বলেন, সিলেট-জকিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচলের শুরু থেকেই বাসগুলো আসা-যাওয়া ৪ ট্রিপের পরিবর্তে ৭ থেকে ৮টি ট্রিপ দিতে শুরু করে। এতে যাত্রী সংকটে ক্ষতির মুখে পড়ে বাস মালিক ও শ্রমিকরা। এ অবস্থায় জেলা মালিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বিগত ১০ জানুয়ারি ও ২৩ জানুয়ারি বিভাগীয় কমিশনার বরাবর দুটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরবর্তীতে বিভাগীয় কমিশনারের আশ্বাসের পরিপেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় কয়েকদির মধ্যে এ ব্যাপারে আলোচনা করে সমাধান দেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করলেও এখন পর্যন্ত তার কোন সুরাহা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে রোববার জেলা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যালয়ে জেলা মালিক-শ্রমিকদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, আগামী ০৮ মার্চ মধ্যে বিআরটিসি বাস চলাচল নিয়ে ষে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন না করা হলে ০৯ মার্চ বৃহষ্পতিবার থেকে সিলেট-জকিগঞ্জ রুটে সব ধরণের বাস চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে।

গেলো ৩০ জানুয়ারি একই দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় পরিবহন মালিক সমিতি ও জেলা বাস, মিনিবাস, কোচ-মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়ন। তবে শুরুতেই ভেস্তে যায় সেই ধর্মঘট।

এর মাস পেরুতেই একই দাবিতে ফের সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের হুমকি দিলেন পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতারা।

এদিকে সিলেট-জকিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে পরিবহণ মালিক-শ্রমিক নেতারা একাট্টা হলেও বিআরটিসি বাস চলাচলকে স্বাগত জানিয়েছে সাধারণ মানুষ।

সাধারণ যাত্রীরা বলছেন, যাত্রীসেবা না বাড়িয়ে দীর্ঘদিন থেকে ওই রুটের যাত্রীদের জিম্মি করে আসছিল পরিবহণ ব্যবসায়ীরা। বিআরটিসি বাস চলাচল শুরু হওয়ায় যাত্রীরা সেই জিম্মিদশা থেকে উদ্ধার হয়েছে।