জকিগঞ্জে ভূমির বিরোধে চাঁদাবাজির মামলার অভিযোগ

জমি সংক্রান্ত বিরোধে সিলেটের জকিগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন চন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষকে মদদ ও নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। টাকার বিনিময়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো চাঁদাবাজির মামলা করিয়ে নিজে আবার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়ে একজন ৭১ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক ও তাঁর সন্তানদের হয়রানি করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।

উপজেলার পশ্চিম কসকনকপুর গ্রামের বাসিন্দা, সরকারি প্রাইমারি স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ফয়জুর রহমান ওরফে আনোয়ার মাস্টারের স্ত্রী মনোয়ারা খানম শনিবার (২৭ আগস্ট) সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন।

তিনি ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সাজানো চাঁদাবাজি মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত, ছেলেদের মুক্তি এবং মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুমন চন্দ্রকে পরিবর্তনের দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে মনোয়ারার পক্ষে লিখিত বক্তব্য দেন তাঁর আত্মীয় সুহেল আহমদ।

লিখিত বক্তব্যে মনোয়ারা উল্লেখ করেন, তার স্বামী উপজেলার বিয়াবাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। পারিবারিক ও ক্রয় করা জমি আত্মাসাতে তার পরিবারকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন ভাসুর ও তাদের সন্তানরা। ইতোমধ্যে একাধিক মামলা তারা করেছে। সর্বশেষ ২০ আগস্ট তার ভাসুর মরহুম আব্দুল হকের ছেলে সাহেদুল আলম বাদী হয়ে চাঁদাবাজি, মারধর ও চুরির অভিযোগে তার স্বামী, তিন সন্তান ও এক বর্গা চাষির বিরুদ্ধে জকিগঞ্জ থানায় মামলা (নং-১১(৮)২২) করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এজাহারে সাহেদুল গত ১৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে তাকে রাস্তায় পেয়ে মারধর ও ৪ লাখ চাঁদা দাবি করার কথা উল্লেখ করেন। অথচ ওইদিন রাতে এ ধরণেন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। মামলা রেকর্ডের সময় ২০ আগস্ট রাত ১২টা ১৫ মিনিট এফআইআর নোটে উল্লেখ করা হলেও একই রাত ৩টার দিকে ঘর থেকে তার ছেলে মামুনুর রশিদ সুহেদ, আমিনুর রশিদ জাহেদ ও হুমায়ুন রশিদ সাদেককে নিয়ে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাদেরকে আদালতে সোপর্দকালে তদন্ত কর্মকর্তা ফরোয়ার্ডিংয়ে রাত ৩টা ৫০ মিনিটের সময় ছেলেদের ভারতীয় সীমান্ত এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের বানোয়াট তথ্য উল্লেখ করেন।

তদন্ত ছাড়া কিভাবে একজন বয়োবৃদ্ধ শিক্ষক ও তার সন্তানদের আসামি করা হলো, তার সঠিক তদন্ত দাবি করেন মনোয়ারা।

মনোয়ারা জানান, ভূমি সংক্রান্ত মামলায় পরাজিত হওয়ার পর থেকেই একের পর এক হয়রানি করছে তাদের স্বজন নামের দুর্জনরা। তাদেরকে নানাভাবে সহায়তা করে আসছেন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) সুমন চন্দ্র। প্রায় প্রতিদিন প্রতিপক্ষের বাড়িতে গিয়ে অবস্থান করছেন তিনি। এমনকি বিরোধপূর্ণ জায়গা প্রতিপক্ষকে দিয়ে দিতে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন সরকারি ওই কর্মচারী। প্রতিপক্ষ সাহেদুলকে জায়গা ছেড়ে দিতে তিনি বারবার চাপ দিচ্ছেন। মামলা করানো, প্রতিপক্ষকে অন্যায় ও অবৈধভাবে মদদ দিয়ে আসা ইন্সপেক্টর সুমন চন্দ্র টাকার বিনিময়ে মামলাটি রেকর্ড করিয়ে নিজেই আবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব নিয়েছেন। গ্রেপ্তারের পর ৭ দিনের রিমাণ্ড আবেদনও করেছেন সুমন চন্দ্র। কিন্তু গত ২৩ আগস্ট আদালত তা নামঞ্জুর করেন।

মনোয়ারা আরও জানান, তার স্বামীর ৬ ভাইয়ের মধ্যে সাহেদুল আলমের পিতা আব্দুল হক, অপর ভাই আব্দুন নুর ও আব্দুল মতিন ইতোমধ্যে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। অপর ভাইদের মধ্যে বড় ভাই আজিজুর রহমান যুক্তরাষ্ট্রে এবং তফজ্জুল আলী গ্রামের বাড়িতে থাকেন। গত কয়েকবছর ধরে বিশেষ করে প্রবাসী আজিজুর রহমান তাদের একটি জায়গার মধ্যে স্থাপনা করার প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় শুরু করেন নানা উৎপাত। পারিবারিক ও ক্রয় করা অনেক জায়গা তার ভাই-ভাতিজাদের নিয়ে তিনি দখলের চেষ্টা শুরু করেছেন। এ নিয়ে তাদের সাথে একাধিক স্বত্ব মামলা চলছে। সর্বশেষ ২০২০ সালে তার স্বামী বাদী হয়ে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল সিলেটে মামলা (নং-৪৮৩/২০) করেন। মামলার রায় তাদের বিপক্ষে গেলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে। মামলার পরও প্রায় প্রতিদিন নানাভাবে বাড়িতে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ভয়ভীতি দেখাচ্ছে প্রতিপক্ষ। আর এতে আইনের রক্ষক হয়ে সুমন চন্দ্র অতি উৎসাহী ভূমিকা নিয়েছেন প্রতিপক্ষকে সহায়তা করতে।

চাঁদাবাজি মামলা ছাড়াও গত কয়েক বছরে গাছ কাটা, ধান কাটা, জবরদখল চেষ্টা ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে বলে মনোয়ার উল্লেখ করেন। তিনি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সুমন চন্দ্রকে পরিবর্তন করে কথিত চাঁদাবাজি মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং সন্তানদের মুক্তি দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, ছেলে কাওসার রশিদ রাহাত, আত্মীয় খালেদ আহমদ, এলাকার মোস্তফা আহমদ প্রমুখ।