ঝিনাইদহে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের তিন শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।
শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার আঠারো মাইল নামক স্থানে লরির সঙ্গে তাদের মোটরসাইকেলটি ধাক্কা খেলে ঘটনাস্থলেই মারা যান তারা।
জেলার সরকারি ভেটেরিনারি কলেজের আন্দোলনের নেতৃত্ব নিয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে ওই হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
মারা যাওয়া তিনজন হলেন, ভেটেরিনারি কলেজের ভিপি সাইদুর রহমান মুরাদ (২৫), একই কলেজের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম (২৩) ও শমরেষ কুমার (২২)। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা তিনজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ভেটেরিনারি কলেজ সংসদের জিএস সাজিবুল ইসলাম সাজিব বলেন, ‘কলেজের একটি পক্ষ আমাকে মারার জন্য দীর্ঘদিন ধরে টার্গেট করে। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিপি মুরাদসহ আমরা ছয় জন তিনটি মোটরসাইকেলে কলেজে ফিরছিলাম। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষরা আমাদের ধাওয়া করে। এ সময় পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা আমাকে আঘাত করে। এতে আমি পাশে থাকা একটি গর্তে পড়ে যাই।’
হামলাকারীদের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করতে ভিপি মুরাদ তার সঙ্গে থাকা দুই জনকে নিয়ে দ্রুত কলেজের দিকে যায়। এমন সময় হামলাকারীরা ৮/১০টি মোটরসাইকেল তাদের ধাওয়া করে। এরপর পুলিশে খবর দিলে তারা আমাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
প্রত্যক্ষদর্শী লিটন হোসেন জানান, ঝিনাইদহ শহর থেকে একটি মোটরসাইকেলে তিনজন কলেজের দিকে আসছিলেন। আঠারো মাইল এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেলটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিদ্যুতের খুঁটি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে সজোরে ধাক্কা দেয়। তিন জনই ঘটনাস্থলে মারা যান।
ঝিনাইদহ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী-পরিচালক শামিমুল ইসলাম জানান, ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে মরদেহগুলো ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডক্টর অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ডিগ্রির দাবিতে বছরখানেক ভেটেরিনারি কলেজের আন্দোলন চালিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া নিয়ে কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী ও জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ফাহিম আহমেদের সঙ্গে বর্তমান কলেজছাত্র সংসদের জিএস সজীবের বিরোধ চলে আসছে।
শুক্রবার রাতে কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি মুরাদ ও জিএস সজীবসহ আরও কয়েকজন শহর থেকে ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। ১০টার দিকে জোহান পার্কের সামনে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিপক্ষরা তাদের ওপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে সজীবসহ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
এ সময় হামলা থেকে বাঁচতে মুরাদসহ তিনজন মোটরসাইকেলে পালানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তাদের মোটরসাইকেলটি রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লরির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় মুরাদসহ তৌহিদুল ও সমরেশের।
ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক শামিমুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে এসে তিনজনকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। লরিটির পেছনে কোনো আলো ছিল না। প্রাথমিক ধারণা, মোটরসাইকেলের অতিরিক্ত গতির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’
এ বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সজীব আহমেদ বলেন, ‘এমন ঘটনার সঙ্গে ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’