পূর্ব বিরোধের জেরে সুনামগঞ্জের ছাতকে গোবিন্দগঞ্জ আব্দুল হক স্মৃতি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান বাবুল চন্দ্র দেবকে কিল-ঘুষি ও পাইপের আঘাতে জখম করেছেন এক ছাত্রলীগ কর্মী ও সহযোগীরা।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় কলেজ গেটের সামনে এ ঘটনা ঘটেছে। আহত ওই অধ্যাপককে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শিক্ষক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।
এদিকে ছাত্র নির্যাতন ও দুর্নীতির অভিযোগে অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের অপসারণের দাবিতে শনিবার (৭ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টায় অধ্যাপক বাবুল কলেজ গেটে গেলে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায় ওই কলেজের ছাত্রলীগ কর্মী রেজাউল ইসলাম ও তার সহযোগীরা। কিল-ঘুষি ও লাথি মেরে তাকে মাটিতে ফেলে মারধর করে দ্রুত ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়ে তারা।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল মুহিউদ্দিন, প্রভাষক আকবর আলী, জাপা নেতা আবুল লেইছ কাহার, আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল করিম, আবদুস সামাদসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। এ সময় সবার সামনে তার ওপরে কিভাবে হামলা হয়েছে তা বর্ণনা করেন অধ্যাপক বাবুল। নেতারা এ ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। পরে রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য সিলেটে পাঠায় কলেজ কর্তৃপক্ষ।
আহত অধ্যাপক জানান, বৃহস্পতিবার কলেজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করায় রেজাউলকে থানায় সোপর্দ করার পরে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। তারই নেতৃত্বে তাকে মারধর করে জখম করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কলেজের প্রভাষক আকবর আলী জানান, ৪ বছর আগে রেজাউল অনার্সে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ভর্তির পর কোনো পরীক্ষায় অংশ নেননি। সুতরাং তার ছাত্রত্ব আছে বলে মনে হয় না।
এদিকে রেজাউল তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, অধ্যক্ষ সুজাত আলী রফিকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এ ঘটনা সাজানো হয়েছে। আমি এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।
এ ঘটনায় এখনও কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি বলে জানান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান।
জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় রেজাউল কলেজ গেট এলাকায় যান। এ সময় ক্লাস ছেড়ে বাইরে আসা নিয়ে তার সঙ্গে অধ্যক্ষ সুজাতের বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে মারধর করে অধ্যক্ষসহ অন্য শিক্ষকরা তাকে আটক করেন। পরে পুলিশ ডেকে তাকে সোপর্দ করা হয়। বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ছাত্রলীগ নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা রেজাউলের মুক্তি ও কলেজ অধ্যক্ষ সুজাত আলীর অপসারণের দাবিতে বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা পর্যন্ত গোবিন্দগঞ্জ ট্রাফিক পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় রেজাউলকে তার ভাইয়ের জিম্মায় ছেড়ে দেয় পুলিশ।
অধ্যক্ষের অপসারণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট ও ছাত্র নির্যাতনের অভিযোগ জানিয়ে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এবং কলেজের অধ্যক্ষ সুজাত আলীর অপসারণ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীরা। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের দেওয়া কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আজ রোববার (৮ জানুয়ারি) মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি, সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিক্ষোভ মিছিল ও সর্বদলীয় ছাত্র ধর্মঘট এবং ১২ জানুয়ারি মানববন্ধন।
লিখিত বক্তব্যে কলেজের বিএ প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী আলী আশরাফ বলেন, ৫ জানুয়ারি ক্লাস করার জন্য কলেজে ঢোকেন রেজাউল। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক না থাকায় তাকে ডেকে আনতে অফিসের দিকে যাওয়ার সময় তার দেখা হয় অধ্যক্ষ সুজাত আলীর সঙ্গে। এ সময় অধ্যক্ষ তাকে বলেন, তোর হাঁটা-চলার ধরন ভালো না। এ কথায় বাকবিতণ্ডার জেরে অধ্যক্ষ অন্য শিক্ষকদের ডেকে আনেন এবং তার নির্দেশে তারা রেজাউলকে বেধড়ক মারধর করে আহত করেন। এরপর কলেজ গভর্নিং বডি ও এলাকাবাসীকে তোয়াক্কা না করে পুলিশ ডেকে এনে তাকে সোপর্দ করেন অধ্যক্ষ। রেজাউলকে নির্যাতনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সাবেক শিক্ষার্থীরা প্রবাস থেকে বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে ফরম পূরণ করেছেন। অনুষ্ঠান উপলক্ষে অধ্যক্ষ প্রায় ২ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করা হয়।