ফাইনাল ম্যাচের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সবাইকে সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ ফুটবল টিমের সানজিদা আখতার লিখেছিলেন, ‘ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসে ট্রফি নিয়ে না দাঁড়ালেও চলবে, সমাজের টিপ্পনীকে একপাশে রেখে যে মানুষগুলো আমাদের সবুজ ঘাস ছোঁয়াতে সাহায্য করেছে, তাদের জন্য এটি জিততে চাই।’ মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে তার এই আবেগমাখানো কথা। তিনি আরও বলেছিলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য শেষ মিনিট পর্যন্ত লড়ে যাবো।’ কথা রেখেছেন সানজিদারা। শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়েই বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) ঘরে ফিরবেন চ্যাম্পিয়নরা। তাদের সেই ‘ইচ্ছে’ পূরণের জোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে দেশে। প্রস্তুত করা হচ্ছে সেই ছাদখোলা বাস।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড পেজে পোস্ট দেন সানজিদা। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এই সাফল্যে হয়তো আরও নতুন কিছু সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া পেতে সাহায্য করবে। অনুজদের বন্ধুর এই রাস্তাটুকু কিছু হলেও সহজ করে দিয়ে যেতে চাই।’
ওইদিন সন্ধ্যায় ৩-১ গোলে নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলার মেয়েরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রশ্ন—এবার কি সানজিদাদের জন্য ছাদখোলা চ্যাম্পিয়ন বাসের আয়োজন হবে? দাবি ওঠে, মেয়েরা মর্যাদাও রাখলো, জাতির জন্য শিরোপাও আনলো। এবার তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দিক বাফুফে। একইসঙ্গে নারী ক্রিকেট ও ফুটবল দলের প্রতি বৈষম্যের ইঙ্গিত করে অনেকে প্রশ্ন তোলেন, এদের জন্য সুযোগ-সুবিধা দিতে আর যেন কার্পণ্য না থাকে।
পরে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল জানান, ছাদ খোলা বাসেই সাফ চ্যাম্পিয়নদের সংবর্ধনা জানাবে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এয়ারপোর্টে থেকে বাফুফে ভবন পর্যন্ত ছাদ খোলা বাসে করে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের জন্য দারুণ এক গর্বের দিন। তারা বাংলাদেশকে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব এনে দিয়েছে। সানজিদা আক্ষেপ করে বলেছিল যে, হয়তো তাদের ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা দেওয়া হবে না। তার আক্ষেপ আমরা ঘোচানোর চেষ্টা করছি।’
আজ মঙ্গলবার (২০ সেপ্টেম্বর) তারই প্রতিফলন দেখা গেলো বিআরটিসির মতিঝিল বাস ডিপোতে। সকাল থেকে একটি দ্বিতল বাসের ছাদ কাটা শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বাসটিকে নতুন করে রাঙিয়ে তুলতে কাজ করছেন বেশ কয়েকজন কর্মী। তাদের বিভিন্ন বিষয় নির্দেশনা দিচ্ছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
আজকের মধ্যেই বাসটি পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বিআরটিসির চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম। তিনি জানান, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় প্রস্তাব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা কাজ শুরু করেছেন। আজ রাতের মধ্যে বাস পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে যাবে।
বিআরটিসির চেয়ারম্যান বলেন, ‘মেয়েরা জাতিকে একটা বড় উপহার দিয়েছে। জাতি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা তাদের এই উদযাপনে সঙ্গী হতে পেরে গর্বিত।’