চুনারুঘাটে অনিশ্চিত বাবা-মা হারানো তিন সন্তানের ভবিষ্যৎ

নেশাগ্রস্ত ও হতাশা থেকেই হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেন সুরজল। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার (২৪ মার্চ) রাতে তাদের মরদেহ দাফন করা হয়। এদিকে, মা-বাবাকে হারিয়ে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়া নিষ্পাপ তিন সন্তানের ঠাঁই হয়েছে তাদের বড় চাচা নুরুল হকের ঘরে। তিন শিশু জিহান (৭) শিরিন (৪) ও আইরিন (২) এখনও বুঝতে পারেনি তাদের বাবা ও মা আর বেঁচে নেই।

পুলিশ এ ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছে। একটি হত্যা মামলা এবং একটি অপমৃত্যু মামলা। এছাড়া এ ঘটনায় আত্মহত্যাকারী সুরজল হক ছাড়া অন্য কারও প্ররোচনা আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার গাদিশাল গ্রাম থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে চুনারুঘাট থানা পুলিশ স্বামীর লাশ গাছে ঝুলানো, স্ত্রীর লাশ খাটের নিচে এবং ও সন্তানের লাশ তীরে ঝুলানো অবস্থায় উদ্ধার করে। সুরতহাল শেষে হবিগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় লাশ পৌঁছে উপজেলার গাদিশাল গ্রামে।

গত দুইদিন এ নিয়ে এলাকায় দিনভর নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে। বাদ যায়নি সোশ্যাল মিডিয়াও। কেউ কেউ বলছেন- নেশাগ্রস্ত হয়ে সুরজল তার স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেছেন, আবার কেউ কেউ বলছেন- পারিবারিক অশান্তি এবং অভাব-অনটনের কারণে তিনি তাদের হত্যা করেছেন।

নিহতের ভাই নুরুল হক জানিয়েছেন, তার ভাই প্রায়ই নেশা করতেন এবং স্ত্রীকে মারধর করতেন। এর আগেও তিনি তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছেন।

আত্মহত্যাকারী সুরজল হকের বেঁচে থাকা দ্বিতীয় ছেলে জিহান মিয়া পুলিশের কাছে জানিয়েছে, তার বাবা তার মাকে মারার আগে সিগারেটের সঙ্গে কিছু একটা খেয়েছেন।

এসব তথ্যে ধারণা করা হচ্ছে সুরজল নেশাগ্রস্ত হয়ে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যা করেছেন। এছাড়া তাদের পরিবারে অভাব-অনটনও ছিল। সরজুলের নিহত স্ত্রী জেসমিন আক্তার তার ১০ বছরের প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে ভিক্ষাও করতেন। তিনি প্রায়ই চুনারুঘাট শহরের মধ্যবাজারে ভিক্ষা করেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

আহম্মদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আমুরোড হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, সুরজল হক নেশাগ্রস্ত থাকতেন এমনটাই এলাকাবাসী জানিয়েছেন। এছাড়া তিনি হতাশাগ্রস্তও ছিলেন।

এলাকার সিনিয়র সাংবাদিক নুরুল আমিন জানিয়েছেন, সুরজল হক এর আগেও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করেছেন। তিনি মানসিক রোগীর মতো আচরণ করতেন। তার বিচার হলে আজ এমন হতো না।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পলাশ জানান, সুরজল মানসিক রোগীর মতো আচরণ করতেন। প্রায়ই তিনি তার স্ত্রীকে মারধর করতেন।

এদিকে পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও উঠে এসেছে, নেশাগ্রস্ত ও হতাশা থেকেই সুরজল এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন।

চুনারুঘাট-মাধবপুর সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার নির্মলেন্দু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, সুরজল হক প্রায়ই নেশা করতেন। এলাকাবাসী ও সুরজলের ভাই নুরুল হকও পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছে।

তিনি জানান, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে অন্য কারও কোনো প্ররোচনা আছে কি না, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত ছাড়া আসলে কিছুই বলা যাবে না। তবে তিনি তার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে নিজে আত্মহত্যা করেছেন- এটা প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশেদুল হক জানান, পুলিশ বাদী হয়ে এ বিষয়ে দুটি মামলা করেছে। একটি হত্যা মামলা এবং অপরটি আত্মহত্যার অপমৃত্যু মামলা। অন্য কারও প্ররোচনা আছে কি না তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানিয়েছেন, সুরজল নেশাগ্রস্ত থাকতেন এবং তার পরিবার অসচ্ছল ছিল বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।