হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহিদমিনার। যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার আছে, সেগুলোরও অবস্থাও জরাজীর্ণ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার ঐতিহ্যবাহী চুনারুঘাট সরকারি কলেজসহ দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়, চুনারুঘাট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, সাটিয়াজুরী উচ্চবিদ্যালয়, ঈসমাইল মুন্সী মাধ্যমিক হাইস্কুল, রানীগাঁও মাসুদ চৌধুরী স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরাশি উচ্চবিদ্যালয়, সাবিয়া চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়, গাতাবালা দাখিল মাদ্রাসা, চাটপাড়া ফাজিল মাদ্রাসা, আইডিয়াল হাই স্কুল,গাজীপুর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, জারুলিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজারবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, আমুরোড হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন হাই স্কুল, নালুয়া মাধ্যমিক হাইস্কুল, কাচুয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, তাহের শামসুন্নাহার মাধ্যমিক হাই স্কুল, বঙ্গবন্ধু হাইস্কুল, পঞ্চাশ হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শাকির মোহাম্মদ হাই স্কুল, আলোর পথে উচ্চবিদ্যালয়, আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়, জনকল্যাণ হাই স্কুলসহ ২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগেই শহিদমিনারের কোনো অস্তিত্ব নেই। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও বেহাল।
এসব প্রতিষ্ঠানের নকশায় শহিদমিনারের কোনো দিকনির্দেশনা নেই। ফলে দীর্ঘদিন ধরে শহিদমিনার ছাড়াই রয়ে গেছে এসব মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বেশিরভাগ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্যোগে বাঁশ, কাঠ, ইট, মাটি, কলাগাছ ও রশি দিয়ে অস্থায়ী শহিদমিনার বানিয়ে সেখানে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণাচরণ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাদ্দাম হোসেন বলেন, শহিদমিনার আমাদের জাতীয়তা এবং ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শহিদমিনার থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পাশেই আমাদের কেন্দ্রীয় শহিদমিনার অবস্থিত, তারপরও প্রত্যেকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছোট করে হলেও ভাষা আন্দোলনের একটি স্মারক রাখতে হবে। এটি না থাকাটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং লজ্জাজনক। আমাদের বীর সন্তানদের স্মরণে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরপরই এখানে শহিদমিনার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি ছিল। এসবের জন্য শিক্ষার্থীদের দাবি জানাতে হবে কেন?
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, রাজার বাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, গাজীপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বিভিন্ন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে শহিদমিনারগুলো রয়েছে, তা বেহাল। কয়েকটি শহিদ মিনার ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় ফাটলও ধরেছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় এমন অবস্থা হয়েছে।
আবার কিছু কিছু বিদ্যালয়ে শহিদমিনার সম্পর্কে কোনো ধারণাই নেই শিক্ষার্থীদের। মাঠের মাঝখানে জায়গা করে নেওয়া বা এক কোনায় স্থাপন করা শহিদমিনার সংস্কার কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয় না। এগুলোর প্রান্তে নেই কোনো স্মৃতিফলকও। ফলে শহিদমিনার থাকলেও এর সঙ্গে পরিচিত নয় শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল হকের সাথে কথা বললে তিনি শহিদমিনার না থাকাসহ জরাজীর্ণ অবস্থার স্বীকার করে বলেন, সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহিদমিনার নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার কোনো কোনো বিদ্যালয়ে যে জরাজীর্ণ শহিদমিনার আছে, সেগুলো সংস্কার করা হচ্ছে। পুরাতন শহিদমিনারে রঙ করার কাজ চলমান রয়েছে।