‘চিন্তার চাষ’ গবেষণায় দেশসেরা শ্রীমঙ্গলের ৪ শিক্ষার্থী

তারা সবাই স্কুলে পড়াশোনা করে। কিন্তু চিন্তা করে চারপাশের প্রতিবেশ নিয়ে। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, কৃষি অর্থনীতি, সামাজিক সমস্যা, শিক্ষা, জীবন ও সংস্কৃতি- প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা নিজেরাই গবেষণার শিরোনাম বাছাই করে এবং সে বিষয়ে গবেষণা করে, সমাধান প্রস্তাব করে। তারা এ যুগের খুদে গবেষক। স্কুল পর্যায়েই শুরু করেছে গবেষণা। তাদের চিন্তার জগৎকে বিকশিত করতে সহায়তা করছে স্বেচ্ছাসেবী গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘চিন্তার চাষ’।

বিভিন্ন বিষয়ের উপর স্কুলের শিক্ষার্থীদের দ্বারা গবেষণামূলক একটি কার্যক্রম ‘চিন্তার চাষ’। বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ, কৃষি অর্থনীতি, সামাজিক সমস্যা, শিক্ষা, জীবন ও সংস্কৃতিসহ নানা বিষয়ে শিক্ষার্থীরা গবেষণা করে, সমাধান প্রস্তাব পরিবেশন করে থাকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ‘৭ম চিন্তার চাষ খুদে গবেষক সম্মেলন ২০২২’ আয়োজন করা হয়েছিল।

‘দেশি গরু ও ফার্মের গরুর দুধের পুষ্টিগুণাগুণের তুলনামূলক যাচাই’ -এই গবেষণা বিষয়ে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেশসেরা স্থান অর্জন করে শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ৪জন মেধাবী শিক্ষার্থী। এরা হলো বিশ্বপ্রিয় ভট্টাচার্য কাব্য, নির্ঝর দেব, জুবায়ের আল আরাবিয়ান এবং বিশাল রায়।

বিশ্বপ্রিয় ভট্টাচার্য কাব্য তার অনুভূতি প্রকাশে বলে, আমরা সকলেই জানি যে, ফার্মের গরুর তুলনায় দেশি গরুর পুষ্টি বেশি। কিন্তু এর কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা ও তথ্যপ্রমাণ ছিল না। এ বিষয়টিকে আমরা গবেষণার মাধ্যমে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমাদের এ গবেষণাটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত ও পুরস্কৃত হওয়ায় আমরা ভীষণভাবে আনন্দিত। এ গৌরবময় অর্জনটি আমাদের ব্যক্তিগত নয়, এটি আমাদের প্রিয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং শ্রীমঙ্গলবাসীর।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম. এ. মান্নান ওই অনুষ্ঠানে পুরস্কার বিতরণ পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে উপস্থিত ছিলেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ইউজিসি অধ্যাপক ড. হাসিনা খান।

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমাদের শিশু-কিশোরদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে এ ধরনের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের আরও অনেক বেশি বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে দক্ষতার বিকল্প নেই।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান প্রধান অতিথি হিসেবে সকালে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন।

এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ কে এম মাহবুব হাসান, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহমুদুর রহমান এবং ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ফিরোজ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন চিন্তার চাষ-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অয়ন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের স্কুলের তিনটি দল চূড়ান্ত পর্যায়ে অংশগ্রহণ করার যোগ্যতা অর্জন করেছিল। এর মধ্যে থেকে ১০ম শ্রেণির একটি দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এতে আমি খুবই আনন্দিত। সেই দলের ৪ সদস্যকে আমি আমার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে আন্তরিক ভালোবাসা, অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই। এটা যে কত বড় একটা অর্জন, বিশেষ করে ভিক্টোরিয়া স্কুলের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা বিরাট জায়গাতে তাদের গবেষণাপত্র উপস্থাপনের মাধ্যমে দেশের সেরা সেরা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তারা আপন গৌরব ধরে রাখার সুযোগ পেয়েছে। এই কৃতিত্ব ভিক্টোরিয়া স্কুলের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের।’

‘চিন্তার চাষ’ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম মেসবাহ বলেন, বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় শিশুদের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ও সৃজনশীলতা তৈরির লক্ষ্যে ‘চিন্তার চাষ’ এ ধরনের আয়োজন করে। দিনব্যাপী এ সম্মেলনে সারাদেশের বিভিন্ন স্কুলের সপ্তম থেকে দশম শ্রেণির নির্বাচিত তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে। দলবদ্ধভাবে তারা ১২২টি গবেষণাপত্রের মৌখিক ও পোস্টার উপস্থাপন এবং ৫টি ধারণাপত্র উপস্থাপন করে। দেশের খ্যাতিমান গবেষক ও বিজ্ঞানীরা গবেষণাপত্র, ধারণাপত্র ও পোস্টারগুলো মূল্যায়ন করেছেন।