চালু হতে পারে ডিসেম্বরে, ভোলাগঞ্জ বাড়বে পর্যটক

চার বছর পর আলোর মুখ দেখছে ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট

২০১৯ সালে নির্মিত সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট চার বছর পর অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এই ডিসেম্বরেই ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট চালু হতে পারে বলে জানিয়েছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ওই বছরেই শেষ হয়েছিল কাজ। ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর বেলা সাড়ে ১১টায় ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের বিভিন্ন কাজ পরিদর্শন করেন সিলেটে কর্মরত ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার নীরাজ কুমার জায়সওয়াল। এ সময় বাংলাদেশের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের এডিএম মাহফুজুর রহমানসহ দুই দেশের প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।

এরপর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী এই বর্ডার হাট উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে তখন বর্ডার হাট চালুর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

তবে দীর্ঘ অপেক্ষায় পর এবার শোনা গেছে আশার বাণী। আজ বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দুই দেশের প্রতিনিধিদলের আলোচনার সভার মাধ্যমে এ বছরের ডিসেম্বরেই এ হাট চালুর কথা জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ১২৪৮/১২ এস এবং ১১ এস পিলারের কাছে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ দশ নম্বর এলাকা এবং ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া হিলস এলাকায় দুই দেশের সমপরিমাণ ১ একর ৫০ শতক জায়গায় সীমান্ত হাট নির্মাণ করা হয়। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সপ্তাহে একদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এই হাটে বেচাকেনা করা যাবে। তবে হাট ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রয়োজনে একাধিক দিনও এ হাট বসতে পারবে। সীমান্ত হাটে ভারত ও বাংলাদেশের দুইদিকে দুটি ফটক থাকবে।

সীমান্তবর্তী এলাকার দুই দেশের জনগণের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সহজলভ্য করার মাধ্যমে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন সাধন করার উদ্দেশেই দেশের বিভিন্ন সীমান্তে বর্ডার হাট চালু হয়েছে। একই ধারাবাহিকতায় ভোলাগঞ্জে হাট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে সীমান্তবর্তী সাধারণ জনগণের সম্পর্ক বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক বন্ধনও দৃঢ় হবে।

প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ডার হাটে বিদ্যমান ৫০টি দোকানের মধ্যে বাংলাদেশের ২৪টি দোকান থাকবে। আর ভারতের থাকবে ২৬টি দোকান। দোকান কোঠাগুলো এরই মধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সোহরাব আহমদ জানান, কয়েক বছর আগেই ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে এই হাটের দেকানঘরগুলো।

দীর্ঘদিন পর সিলেটের সীমান্তবর্তী জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর স্পটের কাছে এই বাজারটি খোলার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, দ্রুত বর্ডার হাটটি চালু হলে দুই দেশের ব্যবসায়ীরা লাভবান হওয়ার পাশাপাশি পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাবে।

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা লুসিকান্ত হাজং বলেন, অনেকে আগেই ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাটের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে দীর্ঘ দিন বর্ডার হাট চালু হয়নি। তবে এ মাসেই এটি চালু করার জন্য আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। আশা করি দুই দেশের প্রতিনিধিদলের সিদ্ধান্তে দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ডিসেম্বরেই চালু হবে ভোলাগঞ্জ বর্ডার হাট।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাজধানীর একটি হোটেলে দুইদিনব্যাপী বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য সচিব পর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ-মেঘালয় সীমান্তের সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও মেঘালয়ের পূর্ব খাসি পাহাড়ের ভোলাগঞ্জ এবং সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সায়দাবাদ ও মেঘালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম খাসি পাহাড় সংলগ্ন লাউড়েরগড়ে নতুন ৬টি সীমান্ত হাট চালুর সিদ্ধান্ত হয়।