মারা যাননি ওস্তাদ জাকির হোসেন, গুরুতর অসুস্থ

কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন গুরুতর অসুস্থ। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।

ওস্তাদ জাকির হোসেনের বন্ধু রাকেশ চৌরাসিয়ার বরাত দিয়ে রোববার পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, ৭৩ বছর বয়সী জাকির হোসেন ফুসফুসজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি হন।

ওস্তাদ জাকির হোসেন রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন বলে তাঁর ম্যানেজার নির্মলা বাচানী জানিয়েছেন। নির্মলা বাচানী পিটিআইকে বলেন, ‘ফুসফুসজনিত অসুস্থতার জন্য দুই সপ্তাহ ধরে তিনি সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।’

ওস্তাদ জাকির হোসেন মারা গেছেন বলে বলে রোববার ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু, এনডিটিভিসহ আরও বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম খবরটি প্রচার করে। আনন্দবাজার পত্রিকার প্রতিবেদনে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোক প্রকাশের কথাও জানানো হয়।

পরে আমির আউলিয়া নামের একজন এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, তিনি জাকির হোসেনের ভাতিজা। জাকির হোসেন মারা যাননি। চাচার শারীরিক সুস্থতার জন্য তাঁরা সবার কাছে দোয়া প্রার্থনা করছেন।

জাকির হোসেনকে ঘিরে প্রচারিত ভুল তথ্য সরিয়ে দেওয়া আহ্বান জানিয়ে আমির আউলিয়া বলেছেন, তিনি সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় আছেন। বিশ্বব্যাপী তাঁর যেসব ভক্ত–অনুরাগী আছেন, সবার কাছে তাঁর জন্য দোয়া চাইছেন।

পরে ওস্তাদ জাকির হোসেনের বোন খুরশিদ আউলিয়া পিটিআইকে বলেছেন, ‘এই মুহূর্তে আমার ভাই গুরুতর অসুস্থ। আমরা ভারত ও বিশ্বব্যাপী তাঁর সব ভক্ত–অনুরাগীদের প্রতি তাঁর সুস্থতার জন্য দোয়া করতে অনুরোধ করছি।’

ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল সংগীতের একজন পুরোধা হিসেবে বিবেচনা করা হয় জাকির হোসেনকে। কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার প্রথম সন্তান জাকির হোসেনের জন্ম ১৯৫১ সালে ভারতের মুম্বাই শহরে৷ তিন বছর বয়স থেকে বাবার কাছে তবলায় তাঁর হাতেখড়ি৷ ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে তাঁর প্রথম কনসার্ট৷ সেই থেকে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ভারতজুড়ে৷ তিনি তাঁর বাদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগৎকে খুব কাছাকাছি আনতে পেরেছেন৷

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি৷ ১৯৭০ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান জাকির৷ শুরু হয় তাঁর আন্তর্জাতিক সংগীতাঙ্গনে বিচরণ। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের ‘লিভিং ইন দ্য ম্যাটেরিয়াল ওয়ার্ল্ড’ অ্যালবামে অংশগ্রহণ তাঁকে এনে দেয় এক বিরাট স্বীকৃতি৷ এর পর থেকেই বহু খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী যেমন জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, ভ্যান মরিসন, জো হেন্ডারসনসহ আরও অনেকের সঙ্গে তবলা পরিবেশন করেন তিনি৷

সংগীতে তাঁর কর্মজীবনের সিংহভাগজুড়ে রয়েছে ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীত৷ তাঁর তবলা দিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিব কুমার শর্মা বা কত্থক নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজকে৷ ১৯৯২ তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’৷ এর মাধ্যমে তিনি সংগীতানুরাগীদের উপহার দিয়েছেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীতের খ্যাতিমান সেরা সংগীতশিল্পীসহ সমকালীন বিশ্বসংগীত৷ ২০০৬ সালে ‘মোমেন্ট রেকর্ড’–এর মুক্তিপ্রাপ্ত অ্যালবাম ‘গোল্ডেন স্ট্রিং অব দ্য সরোদ’ গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়৷ পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, গ্র্যামি ছাড়া আরও বহু পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী জাকির হোসেন।