ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না বড়লেখার শিক্ষা কর্মকর্তা

বড়লেখা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ মামুন।

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ মামুন। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তার অফিসে অবাধে চলছে ঘুষ ও বদলির বাণিজ্য। অভিযোগ আছে নারী শিক্ষকদের যৌন হয়রানিরও। ঘুষ ছাড়া কোনো কাগজে স্বাক্ষর করেন না এই কর্মকর্তা।

নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই শিক্ষা কর্মকর্তা ঘুষ হিসেবে বড় অঙ্কের টাকা নেওয়ার পাশাপাশি ফ্লেক্সিলোড ও ইন্টারনেটের এমবি পর্যন্ত দাবি করেন এবং নেন। বিভিন্ন অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এর প্রমাণ। চাকরি হারানোর ভয়ে এতদিন কেউ প্রতিবাদ না করলেও সম্প্রতি কয়েকজন শিক্ষক তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন।

অনুসন্ধানে ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন ২০১৯ সালে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে বড়লেখায় যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই নারী শিক্ষকদের প্রতি তার খারাপ নজর দেখা যায়। ওই বছরের ২৮ অক্টোবর তিনি এক নারী শিক্ষককে যৌন প্রস্তাব দেন। অপর এক শিক্ষক এর প্রতিবাদ করলে বিপাকে পড়তে হয় ওই শিক্ষককে। সংশ্লিষ্টরা অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো প্রতিবাদকারী ওই শিক্ষককে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে দেন।

২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পান মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন। দায়িত্ব পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ওই পদে টিকে থাকতে তিনি সব ব্যবস্থাই করে রেখেছেন। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর শিক্ষকদের বদলির ক্ষেত্রে ঘুষ বাণিজ্য ঠেকাতে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু করলেও নানা কৌশলে তিনি ঘুষ আদায় করেন বলে জানা গেছে।

সম্প্রতি বদলির জন্য একই সময়ে দুই শিক্ষক আবেদন করলেও একজনের কাছ থেকে ৩৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে দ্রুত বদলির ব্যবস্থা করেন। আর ঘুষের টাকা না দেয়ায় অপর এক শিক্ষকের বদলির আবেদন বাতিল করে দেন।

এছাড়া সরকারি নিদের্শনা অনুযায়ী নতুন বছরে বিনামূল্যে বই বিতরণের নিয়ম থাকলেও তার দাবিকৃত ৫০০ টাকা না দেয়ায় তিনি বিভিন্ন কিন্ডার গার্টেনের বই আটকে রাখেন। পরে দাবিকৃত টাকা প্রদানের পর বই দেন বলে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও মেরামতের বরাদ্দকৃত টাকায় ২৫ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত ভাগ বসানোর অভিযোগ রয়েছে। তার দাবিকৃত টাকা না দিলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের বরাদ্দের টাকা আটকে রাখেন। এমনকি তার মুঠোফোনের ব্যালেন্স ও ইন্টারনেট এমবি ফুরিয়ে গেলে তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে তা নেন বলে কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন।

তিনি কোনো বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে গেলে তার জন্য আগে থেকে দুপুরের খাবার তৈরি করে রাখতে হয়। কখনো হলুদ খামে ভরে টাকাও দিতে হয়। তা না হলে তিনি সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষককে নানা হয়রানি করেন।

এমনকি তিনি নিজে যথাসময়ে অফিসে না এলেও কোনো কারণে কোনো শিক্ষকের বিদ্যালয়ে হাজির হতে একটু দেরি হলে তিনি ওই শিক্ষককে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত দেখিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে অর্থ আদায় করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষক জানান, যেকোনো কাজে শিক্ষা অফিসে গেলে শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুনকে ঘুষ দিতে হয়। তা না হলে তিনি কোনো কাজই করেন না। ছুটির জন্য তাকে ঘুষ দিতে হয়। মাতৃত্বকালীন ছুটি শেষে বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্যও তাকে ঘুষ দিতে হয়। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার ভাগ তাকে না দিলে তিনি শিক্ষকদের হয়রানি করেন। চাকরি হারানোর ভয়ে ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে মুখ খোলেন না।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মীর আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, এসব অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি সকল দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুনজিত কুমার চন্দ বলেন, এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমান বলেন, এসব বিষয়ে কোনো শিক্ষক আমাদের কাছে কিছু জানাননি। তবে আপনি যেহেতু জানিয়েছেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো।