গোলাপগঞ্জে সেতু থেকে কুশিয়ারায় ঝাঁপ দিয়ে যুবক নি-খোঁ-জ

সিলেটের গোলাপগঞ্জের কুশিয়ারা নদীতে ঝাপ দিয়ে আলী হোসেন (৩৫) নামের এক যুবক নিখোঁজ হয়েছে। শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা ২টার দিকে উপজেলার বুধবারীবাজার ইউনিয়নের চন্দরপুর-সুনামপুর সেতুতে এ ঘটনাটি ঘটে।

নিখোঁজ আলী হোসেন বুধবারীবাজার ইউনিয়নের চন্দরপুর গ্রামের মৃত আলা উদ্দিন ওরফে আলাই এর ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শনিবার বেলা ২টার দিকে চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু থেকে আলী হোসেন কুশিয়ারা নদীতে ঝাপ দেয়। এরপর খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। এসময় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল কুশিয়ারা নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায় নি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, আলী হোসেন মাদকাসক্ত ও খুবই উচ্ছৃঙ্খল ছিল। সে রাস্তাঘাটে স্কুলপড়ুয়া ছেলে-মেয়েদের উত্যক্ত করতো।

তবে নিখোঁজ যুবকের বড়বোন রুবি বেগমের দাবি, তার ভাই আলী হোসেন মানসিক রোগী। তার ভাইকে চক্রান্ত করে ধাওয়া করে সেতুর উপরে নেয়া হয় এবং সেখানেই তার ভাইকে ইট-পাথরের টুকরো দিয়ে ঢিল নিক্ষেপ করলে তার ভাই প্রাণ রক্ষার্থে নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হন। তিনি এ বিষয়ে আইনী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানান।

বুধবারীবাজার ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন শনিবার রাত ৮টা ২০ মিনিটে মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, ‘তিনি আল এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি অনুষ্ঠান শেষে বাড়ির ফেরার পর ঘটনাটি স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পারেন’।

কি ঘটেছিল জানতে চাইলে ‘অন্যদের কাছ থেকে শুনেছি’ উল্লেখ করে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, ‘অজ্ঞাত একটি বিষয়ের জের ধরে স্থানীয় আল এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীর সাথে আলী হোসেনের বাকবিতণ্ডা ঘটে। এসময় আলী হোসেন উত্তেজিত হয়ে অশালীন আচরণ প্রদর্শন ও ভাঙচুর করেন। তখন শিক্ষার্থীরা ও নিখোঁজ আলী হোসেনের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে আলী হোসেন নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হন।’

ইউপি চেয়ারম্যান হেলাল উদ্দিন জানান, ‘খবর পেয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা শনিবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। রোববার সকালে পুনরায় খোঁজাখুঁজি করা হবে বলেও তিনি জানান।’

নিখোঁজের সত্যতা নিশ্চিত করে রোববার দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে মুঠোফোনে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ওফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুদুল হক বলেন, ‘শনিবার রাত পর্যন্ত আমরা ডুবুরি দিয়ে কুশিয়ারা নদীতে তাকে খুঁজেছি, কিন্তু পাওয়া যায় নি। আজকেও খোঁজা হবে, ডুবুরি সিলেট থেকে থেকে যাবে।’ তিনি বলেন, ‘নিখোঁজ যুবকের পরিবার থেকে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। হয়তো তারা অভিযোগ জানাতে থানায় আসতে পারে।’

ওসি মাসুদুল হক আরও বলেন, নিখোঁজ আলী হোসেন একজন মানসিক রোগী। সে প্রায়শই আল এমদাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ছুরি, লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো এবং ছেলে-মেয়েদের উত্যক্ত করতো। এ বিষয়ে আমাদের থানায় অভিযোগও রয়েছে। শনিবার সে পুনরায় ছাত্র-ছাত্রীদের উত্যক্ত করায় স্কুলের শিক্ষার্থী বা কিছু লোকজন তাকে ধাওয়া করে। এক পর্যায়ে সে ব্রিজ থেকে কুশিয়ারা নদীতে ঝাপ দিয়ে নিখোঁজ হয়।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত অব্যাহত আছে। তবে নিখোঁজ যুবককে উদ্ধারে কাজ করছে থানা পুলিশ। তাকে জীবিত অথবা মৃত উদ্ধার করার পরবর্তী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এদিকে, শনিবার বিকাল থেকেই চন্দরপুর-সুনামপুর সেতু থেকে একজন যুবকের নদীতে ঝাপ দেয়া এবং এর আগে সেতুতে যুবক ও কিছু কিশোরের সাথে ইটপাটকেল নিক্ষেপের দুটি পৃথক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, অজ্ঞাত যুবক নদীতে ঝাপ দেয়ার পরও তাকে সেতু থেকে ঢিল নিক্ষেপ করা হচ্ছে।