গোয়াইনঘাটে ঘর পেল ১০০ গৃহহীন পরিবার

চতুর্থ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় ৩৯ হাজার ৩৬৫টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার পেল দুই শতক জমিসহ আধাপাকা ঘর।

বুধবার (২২ মার্চ) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এর মধ্যে রয়েছে সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলাও। এ উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প’টি এখন সকলের নজর কাড়ছে, যা দেশের আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে হতে যাচ্ছে একটি মডেল গ্রাম। এ লক্ষ্যে উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরু থেকে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে গোয়াইনঘাট উপজেলা প্রশাসন।

মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না’- প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন অর্থাৎ ‘ক’ শ্রেণির পরিবার পুনর্বাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গোয়াইনঘাট উপজেলায় ইতোমধ্যে ৮৯৫টি গৃহ নির্মাণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্পে’ একসঙ্গে নির্মিত হয়েছে ১০০টি ঘর। এর আগে এ উপজেলায় ১০০টি ঘর একই এলাকায় একসঙ্গে নির্মিত হয়নি। তবে প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে একই এলাকায় একসঙ্গে সর্বোচ্চ ৭০টি, অন্য স্থানে একত্রে ১৫টি ও ১৬টি ঘর নির্মাণ হয়েছে।

বর্তমানে ৪র্থ পর্যায়ে এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে আরও ২০৬টি গৃহের নির্মাণকাজ শেষে বুধবার এসব ঘর হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব মিলিয়ে এ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ৫০০টি, ২য় পর্যায়ে ৪০টি, ৩য় পর্যায়ে ৩৫২টি ও ৪র্থ পর্যায়ে ২০৬টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সীমান্তবর্তী প্রাকৃতিক সম্পদের গর্ভধারিণী এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি হিসেবে খ্যাত গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের হাওরবেষ্টিত এলাকার মধ্যখানে নির্মিত ‘নোয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প’টি এখন দৃশ্যমান। অনেক দূর থেকেও মানুষের নজর কাড়ছে এ আশ্রয়ণ প্রকল্পটি।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যানুসারে, গোয়াইনঘাট উপজেলাধীন নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রাম থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে ৫ দশমিক ৩৬ একর জমির চতুর্পাশে খাল খননপূর্বক ৩ দশমিক ২৫ একর জমি ৬-৭ ফুট উচ্চতায় ভরাট করে প্রায় ২ বছর কম্পেকশনের পর সেই জমিতে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ভরাটকৃত এ জমিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে নির্মাণ করা হয়েছে ১০০টি ঘর।

নোয়াগাঁও মৌজা-লামাপাড়া, জে.এল নং- ১৬৬, খতিয়ান নং- ১, দাগ নং- ৪৭, ৪৯ ও ৫০ এতে মোট জমির পরিমাণ ৫ দশমিক ৩৬ একর (দৈর্ঘ্য ৭৩০ ফুট, প্রস্থ ৩২০ ফুট) আর ভরাটকৃত জমির পরিমাণ ৩ দশমিক ২৫ একর (দৈর্ঘ্য ৬৩৫ ফুট, প্রস্থ ২২৫ ফুট)। উক্ত জমির চতুর্পাশে খাল খননপূর্বক জমি ভরাট করা হয়েছে। খননকৃত খালের দৈর্ঘ্য ১৪৫০ ফুট, খালের পানিধারণ ক্ষমতা, ৪ দশমিক ৮৮ মিলিয়ন গ্যালন, প্রকল্পে নির্মিত গৃহ সংখ্যা ১০০টি (প্রতিটি গৃহে দুটি বেডরুম, একটি বারান্দা, একটি রান্নাঘর ও একটি টয়লেট রয়েছে)। প্রতিটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ২ লক্ষ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা।

এতে গভীর নলকূপের সংখ্যা হচ্ছে মোট ১০টি (সাবমার্জেবল পাম্প ও ওভারহ্যাড ট্যাংকসহ), প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, প্রতিটি গৃহে পৃথক মিটারসহ বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সিলেট থেকে গোয়াইনঘাট উপজেলাগামী পাকা সড়ক হতে প্রকল্পের সংযোগ সড়কের দূরত্ব ১ কিলোমিটার, যা পাকাকরণের কার্যক্রম চলমান। ইউনিয়নের প্রধান বাজার সালুটিকর বাজার হতে এর দূরত্ব ৪ কিলোমিটার।

এসব ঘরের উপকারভোগীর তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের কেউ কেউ থাকতেন অন্যের জায়গায় ঘর তুলে, অনেকে আবার বসবাস করতেন খাস জমিতে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলোর মাধ্যমে প্রকৃত গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারগুলো পেল তাদের স্বপ্নের আপন ঠিকানা। নিজের জায়গায় নিজের ঘরের সামনে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিলো।

অসহায় এ মানুষগুলো নিজেদের স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে মহাখুশি। তারা এখন নিজেদের আত্মপরিচয়ে মাথা উঁচু করে নতুন জীবনে যাত্রা শুরু করলেন।

বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে এসব পরিবারের সদস্যদের হাতে ঘরের কাগজ তুলে দেন প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ। সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমানের সভাপতিত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুনেচ্ছা হক, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শাফিউর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সন্দীপ কুমার সিংহ, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. ইমরুল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. মোবারক হোসেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তৌসিফ আহমদ, গোয়াইনঘাটের উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিনুল হকসহ প্রশাসনের সকল দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।