গৃহবধূর মৃত্যুর দায় এড়াতে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা!

গৃহবধূর মৃত্যুর দায় এড়াতে ও পাওনা ১০ লাখ টাকা আত্মসাত করতে জামাতা, তার বৃদ্ধ মা ও দুই বোনকে মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে।

শনিবার (১৭ জুন) বেলা ৩টায় সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত পাল্টা সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন গোলাপগঞ্জের ঢাকা দক্ষিণ সুনামপুরের কামরুল হাসান।

লিখিত বক্তব্যে কামরুল হাসান বলেন, ১০ জুন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে তার শাশুড়ি ও খালা দক্ষিণ সুরমার হবিনন্দী গঙ্গানগরের মানিক মিয়ার স্ত্রী জোছনা বেগম দাবি করেন তার মেয়ে শেফালী বেগম সুপি স্বামী ও পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন ও প্ররোচনায় আত্মহত্যা করেন। কিন্তু তার এ অভিযোগ সত্য নয়। প্রকৃত পক্ষে শেফালী বেগমের মৃত্যুকে পুজি করে ফায়দা হাসিল করতে গণমাধ্যমকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন তার বাবার বাড়ীর লোকজন।

কামরুল হাসান বলেন, শেফালী বেগম সুপির আত্মহত্যার ঘটনায় আমি দিশেহারা হয়ে পড়েছি। মনোরোগে আক্রান্ত আমার স্ত্রী সুপি আত্মহত্যা করলেও উল্টো আমার ও মা বোনদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন আমার শ্বশুরবাড়ীর লোকজন। এমন কী তারা বিভিন্ন হুমকিও দিচ্ছে।

কামরুল বলেন, সুপীর মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের দায় এড়াতে এবং আমার কাছ থেকে নেওয়া ১০ লাখ টাকা আত্মাসাত করতেই তার ৩ ভাই পারভেজ আহমদ, সাহেদ আহমদ, সুহেদ আহমদ ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। উক্ত ১০ লাখ টাকা সুপির দুই ভাই বিয়ে করে লন্ডন ও জার্মান যেতে ও ঘর বানানোর জন্য ঋন হিসেবে নিয়েছিলেন।

কামরুল হাসান বলেন, ‘২০২১ সালের ৪ এপ্রিল শেফালী বেগম সুপির সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই। একপর্যায়ে সুপি আক্রান্ত হন মানসিকসহ নানা জটিল রোগে। আমি যথাসাধ্য স্ত্রীর চিকিৎসা চালিয়ে যাই। গত ১৯ মার্চ সুপিকে তার মা ডাক্তারের কাছে যাতায়াতের সুবিধার্থে আমাদের বাড়ী থেকে হবিনন্দী গঙ্গানগরের নিজের বাড়ীতে নিয়ে যান। সেখানে প্রায় ২ মাস ছিলেন সুপি। সে সময় আমি সুপির চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করি ও তার খোঁজ খবর নেই। এরই মধ্যে গত ৬ মে আমার স্ত্রী সুপি তাদের ঘরের পার্শ্ববর্তী আব্দুল বাসিত নামের তার মামার বাসায় গিয়ে আত্মহত্যা করেন। এ খবর পেয়ে আমি স্বজনদের নিয়ে শ্বশুর বাড়ীতে যাই। পরে স্ত্রীর দাফন কাফন সম্পন্ন করি।’

কামরুল হাসান বলেন, সুপির মৃত্যুর ৪দিন আগে নগরীর আল হারামাইন হাসপাতালে ডাক্তার দেখান। মনোরোগে আক্রান্ত সুপি সুযোগ পেলেই আত্মহত্যার চেষ্টা করতেন। আমাদের পরিবারের সদস্যরা তাকে চোখে চোখে রাখতেন। একপর্যায়ে সুপির মা ও ভাইবোনেরা তাকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। কিন্তু তাকে দেখে রাখাতো দূরের কথা তাদের অবহেলার কারণেই সুপি সুযোগ পেয়ে মামার ঘরে গিয়ে আত্মহত্যা করেন।

কামরুল বলেন, সুপির মৃত্যুর ঘটনায় যেখানে তাদের বিরুদ্ধে আমার মামলা দায়ের করার কথা সেখানে নিজেদের রক্ষা করতে উল্টো মামলা দিয়ে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সুপির মৃত্যুর জন্য তার মা ও ভাইসহ পরিবারের সদস্যরা দায়ী।

কামরুল বলেন, ৮ মে সকাল ১১টার দিকে সুপির ভাই পারভেজ আহমদ, সাহেদ আহমদ সহ কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি আমাদের বাড়ীতে ঢুকে গালিগালাজ শুরু করেন। তারা হুমকি দিয়ে বলেন, আমিও আমাদের পরিবারের কারণে নাকি সুপি আত্মহত্যা করেছেন। আমাদের বিরুদ্ধে তারা মামলা করবেন। এর আগে যেন আমরা একটা সমাধান করে ফেলি।

কামরুল আরও বলেন, ১২ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে আমাদের বাড়ীর খড়ের ঘরে আগুন দেওয়া হয়। এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ১৩ মে গোলাপগঞ্জ থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। কামরুল বলেন শেফালী বেগম সুপি বেশ কিছুদিন ধরে সিজোফ্রোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগে ভূগছিলেন। তাকে একাধিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে দেখানো হয়েছে। কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি হয়নি। দুইবার তার গর্ভপাত হয়।

কামরুল হাসান বলেন, ‘সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে শেফালী বেগম সুপির মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা চাই। একই সাথে আমরা জীবনের নিরাপত্তাও চাই।’