পঞ্চগড়ের আহমদিয়া মুসলিম জামাত তথা কাদিয়ানিদের এক জলসাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে দেশজুড়ে ছড়িয়ে না পড়ে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি দেশব্যাপী নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের নিরাপত্তায়ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শুধু পঞ্চগড়ই নয়, গোটা দেশের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি ঘিরে কোনো ধরনের গুজব ছড়িয়ে দেশব্যাপী যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয়, সে জন্য কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পুলিশের সাইবার ইউনিটগুলো।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, নাগরিকদের নিরাপত্তায় পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশে সব ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করা হয়েছে। এই বিশৃঙ্খলা যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, পঞ্চগড়ের এই পরিস্থিতি ঘিরে যাতে কোনো গুজব মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, তা নিশ্চিতে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে বাংলাদেশ পুলিশের সব সাইবার ইউনিট। গুজব ছড়াতে পারে, এমন সম্ভাব্য উৎসগুলো নজরদারি করা হচ্ছে। প্রতি মুহূর্তে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সাইবার প্ল্যাটফর্মের তথ্য।
কর্মকর্তারা বলছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় কারাবন্দি জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে দাঙ্গা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ২০১৩ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহজুড়ে।
এ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে বড় ধরনের প্রাণহানি ঠেকাতে আগাম প্রস্তুতি নেওয়াসহ অল্প সময়ের মধ্যেই পঞ্চগড় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। দেশে এ পর্যন্ত ঘটে যাওয়া গুজবকেন্দ্রিক মৃত্যুর সবচেয়ে বড় এ ঘটনার অভিজ্ঞতা পঞ্চগড় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজে লাগাচ্ছে পুলিশ।
গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর পঞ্চগড়ে হামলা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষ বৈঠক করে করণীয় নির্ধারণ করেন পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা।
ওই দিন পুরো পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে মুহূর্তে মুহূর্তে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রয়োজনীয় সময়োপযোগী দিক নির্দেশনা প্রদান করা হয় ঘটনাস্থলে স্থানীয় পুলিশ ইউনিট ও কর্তব্যরত পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ইউনিটগুলোকে।
জানা গেছে, পঞ্চগড়ের ঘটনার পর সারাদেশের জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারদের (এসপি) বিশেষ বার্তা পাঠানো হয় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে। বলা হয়, নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে। একই সঙ্গে যেকোনো ধরনের গুজব ঠেকাতে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়াসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতেও বলা হয়।
পাশাপাশি প্রতিটি জেলার পরিস্থিতি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাতেও বলা হয় মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের। মোট কথা, পঞ্চগড় পরিস্থিতির সুযোগে যাতে কেউ দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা না করতে পারে—সে বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত রাখতে বলা হয়। ভিন্ন কোনো পরিস্থিতি টের পেলেই জানাতে বলা হয় পুলিশ সদর দপ্তরকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের (অপারেশন্স) উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হায়দার আলী খান বলেন, পঞ্চগড়ে সৃষ্ট পরিস্থিতির জেরে অন্য কোথাও যেন কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর সুযোগ কেউ না পায়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের পক্ষ থেকে।
তিনি বলেন, পঞ্চগড়ে আহমাদিয়া জামাতের সদস্যের ওপর হামলার পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুধু আহমদিয়া মুসলিম জামাত নয়, সবার নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।