গাজায় প্রাণহানি ১০ হাজার ছাড়িয়েছে, অনড় অবস্থানে ইসরায়েল

গত একমাস ধরে চলছে হামাস-ইজরায়েল সংঘাত। এমন বাস্তবতায় ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া এ হামলার ৩০তম দিনে ইসরায়েলের হামলায় উপত্যকায় প্রাণহানির সংখ্যা ১০ হাজার ২২ জনে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা বলেছেন, ইসরায়েলি হামলায় ১০ হাজার ২২ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৪ হাজার ১০৪ শিশু, ২ হাজার ৬৪১ জন নারী ও ৬১১ জন বৃদ্ধ রয়েছে। এতে পরিষ্কারভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের শিকারদের তিন-চতুর্থাংশই নিরীহ জনগোষ্ঠী।

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে এ সময়ের মধ্যে আহত হয়েছেন আরও ২৫ হাজার ৪০৮ জন।

রোববার সারারাত ইসরায়েলি বাহিনীর ভারি বোমা হামলায় গাজার প্রায় ২০০ মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ বিষয়ে আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক বিবিসির সাংবাদিকদের বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষ অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভ্যানে করে, এমনকি গাধার পিঠে চড়িয়ে হতাহতদের হাসপাতালে আনা হচ্ছে।’

রোববারই গাজা শহরকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলার কথা জানায় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী। তাদের দাবি, ‘অবরুদ্ধ উপত্যকাকে দ্বিখণ্ডিত করে ফেলা হয়েছে।’

আরও পড়ুন : গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

এ বিষয়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বর্তমানে উত্তর গাজা ও দক্ষিণ গাজা অস্তিত্বমান।’

৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসরায়েলি সেনারা উত্তরাঞ্চলীয় গাজা সিটিতে প্রবেশ করবেন বলে রোববার আশা প্রকাশ করে ইসরায়েলের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার রাত নামার পর উত্তর গাজায় বড় ধরনের বিস্ফোরণের চিত্র দেখা যায়। তবে গাজাজুড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সামরিক অভিযানের নতুন অধ্যায়ের বিস্তারিত জানা কঠিন হয়ে পড়েছে।

যুদ্ধ বন্ধে অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে জাতিসংঘের বড় বড় সব সংস্থাগুলোও। এক যৌথ বিবৃতিতে সংস্থাগুলোর প্রধানরা বলেছেন, ‘যথেষ্ট হয়েছে। এবার যুদ্ধ বন্ধ হোক।’

বিবৃতিতে তারা আরও বলেন, ‘একটি পুরো জনগোষ্ঠী অবরুদ্ধ এবং হামলার মুখে রয়েছে। বেঁচে থাকার জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সুবিধা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে। তাদের বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, হাসপাতাল এবং উপাসনালয়ে বোমা হামলা করা হয়েছে। এটা একেবারে গ্রহণযোগ্য নয়।’

তবে শুরু থেকেই যুদ্ধবিরতির জন্য ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপ প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল। তেল আবিব এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘৭ অক্টোবর দক্ষিণ ইসরায়েলে আক্রমণকালে হামাস যাদের জিম্মি করেছে, তাদের আগে মুক্তি দিক।’

রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামাসের হাতে এখনও ২৪২ জনের বেশি ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিক জিম্মি রয়েছেন।

এদিকে হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ যাতে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে লক্ষ্যে বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য সফরে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুবার তিনি ইসরায়েল সফর করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে অতর্কিত রকেট হামলা করে গাজা উপত্যকার বর্তমান শাসক গোষ্ঠী হামাস। হামলায় প্রাথমিকভাবে ইসরায়েলের অন্তত ১৪০০ নাগরিক প্রাণ হারান।

হামলার প্রতিক্রিয়ায় উপত্যকার একের পর এক ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদে হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল।