গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের আহ্বান

গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং অবাধ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা নিশ্চিত করতে সকল সম্প্রচার মাধ্যম ও প্রিন্ট মিডিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে গণমাধ্যম সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বক্তারা। সিরডাপ মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: প্রসঙ্গ গণমাধ্যম’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন।

যদিও দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রিন্ট ও সম্প্রচার মাধ্যম রয়েছে এবং তারা স্বাধীনতার পর থেকে গত পাঁচ দশকেরও বেশি সময় যাবত প্রকৃত সাংবাদিকতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেনি এবং যার ফলে দেশে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়েছে। খবর বাসসের।

বক্তারা বলেন, মিডিয়া হাউসের মালিকানাকে পুঁজি করে এমনকি একদল অসাধু মিডিয়া মালিক এবং সাংবাদিকরা বিশেষ করে গত পনের বছরে অর্থ উপার্জনে ব্যস্ত ছিল। একধরনের অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এবং ক্ষমতাসীন দলের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে তারাও মাফিয়ায় পরিণত হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গণমাধ্যমে সংস্কার আনাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। কারণ গত পনের বছরে গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা প্রসারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারেনি।

সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেন, সংস্কারের প্রধান কাজ হল গণমাধ্যমের ব্যর্থতা চিহ্নিত করা, যা গত পনের বছর ধরে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বৈধতা দিয়ে সাংবাদিকতার নৈতিকতা লঙ্ঘন করেছে। একই সাথে গণমাধ্যম কর্মীদের অধিকার রক্ষা করাও সংস্কারের অন্যতম কাজ।

সংস্কারকে একটি অনন্য সুযোগ উল্লেখ করে আলম বলেন, ‘দেশের সাংবাদিকতার মান মূল্যায়নে এটি আমাদের জন্য একটি বিরল সুযোগ।’ কেননা ক্রমবর্ধমান ভুঁইফোঁড় মিডিয়া সাংবাদিকতার মানকে হুমকির মুখে ফেলেছে, ‘এমনকি যোগ্য সাংবাদিকরাও তাদের অবদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’

গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে মিডিয়া রিফর্ম কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য হবে-গণমাধ্যমকে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার উপযোগী করে তোলা, যা গত পনের বছরে আক্ষরিক অর্থে অসম্ভব ছিল। স্বাধীনভাবে সংবাদ প্রচারে বাধা সৃষ্টির জন্য যে সমস্ত আইন প্রণয়ন করা হয়েছে, সেগুলো দূর করতেও সুপারিশ করবে সংস্কার কমিশন।’

সংস্কারের প্রধান কাজ সরকারী এবং বেসরকারী উভয় মিডিয়ার সামগ্রিক দায়িত্ব এবং তাদের ম্যান্ডেটের দিকে নজর দেওয়া উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই মিডিয়াগুলো সঠিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে কিনা এবং ভবিষ্যতে তারা কীভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারে সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়া।

তিনি বলেন,‘স্বাধীনতার পর দেশে আমরা প্রথমবারের মতো একটি মিডিয়া জরিপ পরিচালনা করব। এই কমিশন ৪৮ হাজার ব্যক্তির মধ্যে মিডিয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে একটি জরিপ চালাবে। গণমাধ্যম সংস্কারে জরিপটি হবে একটি যুগান্তকারী কাজ।’

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, ‘গণমাধ্যমে শৃঙ্খলা আনার জন্য আমরা মূলধারার প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সকল সম্পাদকদের কাছে একটি সাধারণ এবং মানসম্পন্ন সম্পাদকীয় নীতি প্রণয়ন করার প্রত্যাশা করছি।’

গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ বলেন, সরকারের উচিত গণমাধ্যমের প্রতিনিধিত্বশীল একটি স্থায়ী মিডিয়া কমিশন গঠন করা এবং এটি গণমাধ্যমের সকল সমস্যা দূর করতে সহায়তা করবে।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে গুলি করে মানুষ হত্যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যারা উৎসাহ দিয়েছিলেন, তাদের ছাড়া সাংবাদিকদের সকল অপকর্মকে কমিশন ক্ষমা করতে পারে।

বাসস প্রধান বলেন, রেডিও, টিভি, অনলাইন পোর্টালসহ অধিকাংশ গণমাধ্যম দলীয় ভিত্তিতে অনুমতি পেয়েছে। সেসব গণমাধ্যমে ভারসাম্য আনতে কমিশনকে অবশ্যই বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে।

গোলটেবিল সঞ্চালনা করেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান এবং সভাপতিত্ব করেন সিজিএস চেয়ার মুনিরা খান।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, দৈনিক মানব জমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, এএফপির ফ্যাক্ট চেক সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা, দৈনিক সমকালের যুগ্ম সম্পাদক আবু সাঈদ খান, জাপানের এনএইচকে টিভির সিনিয়র সাংবাদিক পারভীন এফ চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশ এর সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী ও সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল।