বন্যায় পানিবন্দি কারণে গত কয়েকদিন ধরে খাবার সংকট দেখা দিয়েছে তার পরিবারে। বর্তমান অবস্থায় পরিবারের সদস্যরা এক রকম খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করেছেন। কিন্তু ঘরের খাবার ফুরিয়ে যাওয়ায় নিরুপায় হয়ে মুঠোফোনে বিয়ানীবাজার থানার ওসির কাছে পরিবারের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে সহায়তা চান বন্যা কবলিক এলাকার জনৈক এক ব্যক্তি।
শুক্রবার (২৫ জুন) রাতে ফোন পাবার কিছুক্ষণ পর ওই পরিবারের বাড়ির দরজায় খাদ্য সহায়তা নিয়ে পৌঁছে যায় বিয়ানীবাজার থানার ওসিসহ পুলিশের একটি টিম। দরজা খুলতেই ওই পরিবারকে ‘এই খাদ্যসামগ্রী পুলিশের পক্ষ থেকে উপহার’ উল্লেখ করে পুলিশ সদস্যরা তাদের হাতে খাদ্যসামগ্রী ভর্তি ব্যাগ তুলে দেন। তখন খাদ্যসামগ্রী ভর্তি ব্যাগ দেখে অনেকটা অবাক হন ভুক্তভোগী ওই পরিবারটির লোকজন।
মানবিকতার এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায়। তিনি জানান, শুক্রবার রাতে হঠাৎ একজন পানিবন্দি মানুষ তার পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা চান। পরে আমরা রাতের আঁধারেই ওই বাড়িতে খাদ্যের যোগান দিই।
ওসি হিল্লোল রায় আরও জানান, বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে ওই বাড়িটির পুরো আঙিনা। পানিবন্দি থাকায় বেশ কয়েকদিন থেকে পরিবার-পরিজনকে নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করছেন তারা। লোকলজ্জার ভয়ে কারো কাছে মুখ খুলে সহযোগিতার কথা বলতেও পারছেন না। তাদের সেই পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে পুলিশ প্রশাসনের হয়ে তাদেরকে উপহারস্বরুপ খাদ্যসামগ্রী পৌছিয়ে দিয়েছি।
জানা গেছে, উজানি ঢল ও টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যায় বিয়ানীবাজার উপজেলার ৮০ ভাগ এলাকাই প্লাবিত। পানিবন্দি দুই লাখেরও বেশি মানুষ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পানিবন্দি এলাকার দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ পৌছালেও অনেক কবলিত পরিবার এখনো ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত। শুক্রবার রাতে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যা দূর্গত এলাকার জনৈক একজন বানবাসী বাসিন্দা বিয়ানীবাজার থানার ওসি হিল্লোল রায়ের অফিসিয়াল মুঠোফোন নম্বরে করলে করে খাদ্য সহায়তা চান। জনৈক ঐ ব্যক্তির মুখের কথা শুনে তাৎক্ষনিক রাতের আঁধারেই ত্রাণ ভর্তি গাড়ি নিয়ে তার বাড়িতে হাজির বিয়ানীবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা।
সেখানে গিয়ে খোঁজ নিয়ে বিয়ানীবাজার থানার ওসিসহ পুলিশের পুরো টিম জানতে পারে, সেখানকার বেশ কয়েকটি বানবাসী পরিবার সত্যিকার অর্থেই অভাব-অনটন পোহাচ্ছেন। তারা সামাজিকতার ভয়ে মুখ ফুটে কারো কাছে সহায়তা চাইতে পারছেন না। এসময় পুলিশ সদস্যরা খোঁজ নিয়ে সেখানকার আরও ২০টি পরিবারের মাঝে গোপনে খাবার পৌঁছে দিয়ে আসেন।
এসময় বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ হিল্লোল রায়ের সাথে থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মেহেদী হাসান, এসআই যীশু দত্ত ও জিতু মিয়াসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা ছিলেন।