সিলেটের ওসমানীনগরে প্রবাসি পিতা-পুত্র নিহতের ঘটনার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও মর্মান্তিক এ ঘটনার ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনার দিন থেকে বুধবার পর্যন্ত তদন্তে নেমেছে পুলিশ, সিআইডি, পিবিআই, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার বাহিনী। তারা ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন। অথচ এখনো ৫ প্রবাসি বিষক্রিয়ায় আক্রান্তের কোনো ক্লু-ই উদঘাটন করতে পারছে না আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কে বা কারা কি কারণে একই পরিবারে যুক্তরাজ্য প্রবাসি ৫ জনকে বিষাক্ত পদার্থ দিয়েছে তার কোনো কুলকিনারা করতে পারছে না।
গত মঙ্গলবার অচেতন অবস্থায় ৫ প্রবাসিকে তাজপুরস্থ ভাড়াটিয়া বাসা থেকে উদ্ধারের পর নিহত যুক্তরাজ্য প্রবাসি রফিকুল ইসলামের শ্যালক দিলোয়ার তার স্ত্রী শোভা বেগম এবং ভাই সেবুলসহ একাধিক ব্যক্তিকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। তবে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন পিপিএম জানিয়েছেন ঘটনার ক্লু উদঘাটন না হওয়া পর্যন্ত থানা ইউডি মামলা হবে। ক্লু উদঘাটনসহ ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া গেলে পরবর্তীতে হত্যা মামলা হিসেবে নেয়া হবে।
এদিকে ঘটনার খবর পেয়ে নিহতের দুই ছোট ভাই শফিকুল ইসলাম, বিজেকুল ইসলাম, বোন শাহীনা বেগম ও মা জরিনা বেগম বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছেন।
বুধবার বিকেলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিহত পিতা-পুত্রের ময়না তদন্ত শেষে লাশ দুটি নিহতের পরিবারের নিকট হস্তান্তর করেছে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। নিহতদের লাশ আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার দয়ামীর ইউপির বড় ধিরারাই গ্রামের তাদের পারিবারিক কবরস্থানে লাশ দাফন করা হবে বলে নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন।
সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ এ ভর্তি নিহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুসনেআরা বেগম ও ছেলে সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ভাল রয়েছে তবে নিহত রফিকুল ইসলামের একমাত্র মেয়ে সামিরা ইসলামের অবস্থা আশংকাজনক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে বুধবার দুপুর ১টার দিকে সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন পিপিএম তাজপুর স্কুল রোডে ঘটনাস্থলের বাসা পরিদর্শন করেন। এ সময় ডিআইজির সাথে ছিলেন, সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওসমানীনগর সার্কেল রফিকুল ইসলাম ও ওসমানীনগর থানার ওসি এসএম মাঈন উদ্দিন।
এদিকে প্রাথমিকভাবে নিহত প্রবাসিদের স্বজনদেরকে টার্গেট করেই তদন্তকাজ এগিয়ে নিচ্ছে পুলিশ।
সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন জানান, সময়ে সময়ে স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও একইসাথে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন তিনজনের সুস্থতার জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে।
তারা সুস্থ্য হলে স্বজনদের বক্তব্যের সাথে মিলিয়ে তদন্তের একটা অগ্রগতি হতে পারে বলে জানান তিনি।
সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মফিজ উদ্দিন পিপিএম বলেন, পুলিশ বিভিন্ন বিষয় মাথা নিয়ে তদন্ত অব্যাহত রেখেছে। পরিবারের ভেতর থেকে কেউ বিষ প্রয়োগ করেছে নাকি বাইরে থেকে কেউ বিষ প্রয়োগ করেছে সে বিষয়টি আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। এখন পর্যন্ত জানার মতো বড় ধরণের কোনো তদন্তের অগ্রগতি নেই। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনজনের মধ্যে দুইজনের অবস্থা ভাল আছে নিহতের একমাত্র মেয়ে সামিরার অবস্থা সংকটাপন্ন।
নিহত রফিকুলের শ্বশুর আনফর আলী বলেন, ঘটনার দিন আমার মেয়ে জামাই নিজ হাতে বাজার থেকে বার্গারসহ বিভিন্ন ধরণে ফাস্টফুড কিনে আনেন। রাতে তারা পরিবারের সবাই ফাস্টফুড খেয়ে ১০টার দিকে একই কক্ষে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে ডাকাডাকি করে না ওঠায় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ দরজা ভেঙ্গে অচেতন অবস্থায় ৫জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার আমার মেয়ে জামাই রফিকুল ও নাতি মাইকুল ইসলামকে মৃত ঘোষণা করে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও এর বিচার চাই।
এদিকে নিহত রফিকুলের যুক্তরাজ্যস্থ বাসবভন এলাকার কার্ডিফ শহরে তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। যুক্তরাজ্যসহ বাংদেশের ওসমানীগরের এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি নিয়ে তোলপাড় দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার সিলেটের ওসমানীনগরে তাজপুর স্কুল রোডরে একটি বাসা থেকে এক পরিবারের ৫ যুক্তরাজ্য প্রবাসীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ওসমানীনগর থানা পুলিশ। হাসপাতালে নেয়ার পর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের ধিরারাই (খাতিপুর) গ্রামের মৃত আবদুল জব্বারের ছেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসি রফিকুল ইসলাম (৫০) ও তার ছোট ছেলে মাইকুল ইসলাম (১৬) মারা যায়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হুছনারা বেগম (৪৫), ছেলে সাদিকুল ইসলাম (২৫) এবং মেয়ে সামিরা ইসলামকে (২০) সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে নিহতের স্ত্রী হুসনেআরা ও ছেলে সাদিকুল ইসলামের শারীরিক অবস্থা ভাল রয়েছে তবে তার একমাত্র মেয়ে সামিরা বেগমের অবস্থা আশংকাজনক রয়েছে।
এর আগে গেল ১২ জুলাই পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে জন্মভুমিতে আসেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী রফিকুল ইসলাম। ৬ দিন ঢাকায় ছেলে সাদিকুল ইসলামের চিকিৎসা শেষে ১৮ জুলাই উপজেলার তাজপুর বাজারে ভাড়া বাসায় ওঠেন। ওই বাসাতেই মর্মান্তিক ঘটনার শিকার হন তারা।