বাংলাদেশ এনিম্যাল হাসবেন্ড্রী কাউন্সিল আইন-২০২৩ প্রণয়নের নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) দ্বিতীয় দিনের মতো ক্লাস পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি ও মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ ভবনের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন শেষে সংবাদ সম্মেলনে করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলনে সিকৃবি ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৮২ সাল থেকে বিদ্যমান বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিলের আওতায় বর্তমানে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারা অনুযায়ী প্রাণিসম্পদ সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ, মানসম্মত সেবা প্রদান ও অংশীজনদের প্রয়োজনীয় সকল বিষয়াবলী বাস্তবায়িত হয়ে থাকে। প্রাণিসম্পদের বিষয়ে আরো একটি স্বতন্ত্র কাউন্সিল গঠন ও আইন প্রণয়ন কোনোভাবেই কাম্য নয়। যা বিদ্যমান বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল আইন-২০১৯ এর সাথে সাংঘর্ষিক হবে।
তিনি বলেন, দেশের বৃহত্তর ও প্রাণিসম্পদ উন্নয়নের স্বার্থে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভেটেরিনারি এবং অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েটদের দ্বন্দ্ব নিরসন কল্পে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে কর্মরত এন্ট্রি লেভেলে কর্মকর্তাদের সমন্বয় কোর্স চালু করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সমন্বিত কোর্স চালু করার জন্য বাংলাদেশ সরকার আহ্বান জানান। এমতাবস্থায় সমন্বয় কোর্সের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন না করেই নতুন করে একটি আইন প্রণয়ন ও কাউন্সিল গঠন প্রাণিসম্পদ উন্নয়নে বিরাট প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।
তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে বিদায়ী সচিব, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক তড়িঘড়ি করে এ ধরণের আইন প্রণয়নের উদ্যোগ স্পষ্টত উদ্দেশ্য প্রনোদিত। এতে প্রতিয়মান হয় যে, বিদায়ী সচিব মহোদয় একজন অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি গ্রাজুয়েট হওয়ায় উনি পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ করছেন যা পরবর্তীতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করবে।
এ নিয়ে সিকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ জামাল উদ্দিন ভুঁঞা বলেন, কোনো একটি আইন তৈরি হওয়ার সময় আমরা দেখি সাধারণ জনমানুষের মধ্যে একটি চাহিদার তৈরি হলে উপরমহলগুলো এইটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করে। কিন্তু ভেটেরিনারি কাউন্সিলের আদলে নতুন কাউন্সিল গঠনের আইন তৈরি করার প্রচেষ্টায় দেখা যাচ্ছে এখানে কোনো চাহিদা তৈরি না হতেই সচিব পর্যায়ে তারা এইটার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন। যেখানে সারা পৃথিবী একটি মাত্র ভেটেরিনারি কাউন্সিলের আওতায় চলছে সেখানে আমাদের দেশে দুইটি কাউন্সিল তৈরি অবশ্যই কোনো একটি গোষ্ঠিকে অসৎভাবে সুবিধা প্রদানের অপচেষ্টা ছাড়া আর কিছুই নয়। আমরা মনেকরি অতি দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সকল অপচেষ্টাকে বানচাল করা উচিত।
এদিকে দাবি বাস্তবায়ন না হলে করণীয় ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস পরিক্ষা বর্জন কর্মসূচি কতদিন চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে ভেটেরিনারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. সিদ্দিকুল ইসলাম বলেন, এই হাসবেন্ড্রী কাউন্সিল আইনের বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। আমরা চেষ্টা করছি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ করে এটিকে এখানেই স্থগিত করে দেয়ার জন্য। আর যদি সম্ভব না হয় তখন মন্ত্রী পরিষদে উত্থাপিত হবে। তখন বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে এটিকে স্থগিত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে এবং সে ক্ষেত্রেও যদি স্থগিত না হয় পরবর্তীতে আমরা আইনজীবীর মাধ্যমে আইনের আশ্রয় নিব। এছাড়াও আজকে জাতীয় ভেটেরিনারি ডিন কাউন্সিলের মিটিং হবে এবং লাইভস্টক ক্যাডারদের অ্যাসোসিয়েশনের বিভিন্ন ব্যাচ এর সঙ্গে বাংলাদেশ ভেটেরিনারি অ্যাসোসিয়েশন বসবে। এই সমস্ত মিলেই পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। আজকের সকল মিটিং সমাবেশ থেকে যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে তার উপর ভিত্তি করেই আগামীকাল ক্লাস পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।